বাংলাদেশে অনলাইন সার্ভিসিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস, সেবা এক্স ওয়াই জেড ( sheba xyz )। শুরু থেকেই এর অগ্রগতি ছিল চোখে পড়ার মত। ইতোমধ্যে উন্নত সার্ভিসের সুবাদে অর্জন করে নিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার সাথে অসংখ্য সুনাম। তাই সেবার সার্ভিস নিয়ে মানুষের মধ্যে আছে বিশেষ কৌতুহল। কী আছে এই অ্যাপসে? কেনই বা এর এত জনপ্রিয়তা?
আপনার প্রয়োজনীয় গৃহস্থালীর যেকোনো সেবা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, প্লাম্বার, রং মিস্ত্রি সহ যেকোনো সার্ভিসের জন্য আর কোন হয়রানি পোহাতে হবে না। কারণ এই সকল সার্ভিস নিয়ে আপনার সাথে থাকছে এই হাউজ হোল্ড সার্ভিস মার্কেটপ্লেসটি। মুহুর্তের মধ্যে আপনার হাতের নাগালে যেকোনো সেবা পৌঁছে দিতে এর জুড়ি নেই। তাই আপনার জীবনকে আরো আধুনিক ও সহজ করতে জেনে নিন সেবা এক্স ওয়াই জেড (Sheba xyz) এর আদ্যোপান্ত।
সেবা এক্স ওয়াই জেড ( sheba xyz ) সূচনা
এই জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মটির অফিশিয়াল সূচনা হয় ২০১৬ সালের ২৯ এ জুলাই। এর সিইও হলেন আদনান ইমতিয়াজ হালিম। আর চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে আছেন ইলমুল হক সজিব৷
সনামধন্য কোম্পানির জব ছেড়ে পুরো দেশ ও দেশের মানুষের অগ্রগতির কথা চিন্তা করে তারা নতুন এক উদ্যোগের শুরু করেন তারা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে বিভিন্ন স্তরের সার্ভিস দানকারী ও ব্যবসায়ীরা যেন দেশের সকল প্রান্তে তাদের সেবা পৌঁছে দিতে পারে।
এই লক্ষ্য থেকেই তারা প্রতিষ্ঠান টির নাম দেন সেবা এক্স ওয়াই জেড। এবং এখন পর্যন্ত তারা কাজ করে যাচ্ছেন দেশের মানুষের জীবনযাপন কে আরো সহজ ও সুন্দর করার লক্ষ্যে।
শুরুর দিকের গল্প
চিন্তা করার সাথে সাথেই এত বড় একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। এক পা, দুই পা করে শুরু হয় এর পথচলা। ২০১০ সাল থেকে একটু একটু করে এই কোম্পানি গড়ে তোলার প্রস্তুতি শুরু করা হয়। ক্যারিয়ার ও আর্থিক অবস্থাকে বাজি রেখে ২০১৫ সাল থেকে সেবার টিম গঠন শুরু হয়।
টিম নিয়ে টিপস পেতে চাইলে আমাদের এই ব্লগটি পড়ে আসতে পারেন। নিজেকে নতুন টিমে মানিয়ে নেওয়ার সহজ ৭ টি টিপস।
একদম শুরুর দিকে তারা নিজেরাই গ্রাহকের ঘরে ঘরে গিয়ে সার্ভিস ও সুবিধা অসুবিধা গুলো পর্যালোচনা করেন। প্রায় চৌদ্দ মাস ধরে তারা এই পরীক্ষা মূলক কাজ চালিয়ে যান এবং সঠিক সার্ভিস নিশ্চিত করার জন্য নেন শতশত ইন্টারভিউ।
এবং ফাইনালি ২০১৬ সালের জুন মাসে দেশে অফিশিয়াল ভাবে এই প্ল্যাটফর্মের সার্ভিস চালু হয়। আর বর্তমানে সেবা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সব চেয়ে জনপ্রিয় সার্ভিসিং মার্কেটপ্লেস।
সেবা এক্স ওয়াই জেড ( sheba xyz ) কিভাবে কাজ করে?
এটি কাজ করে বিভিন্ন সার্ভিসিং প্রতিষ্ঠান কিংবা ইনডিভিজুয়াল ব্যক্তিকে নিয়ে। যারা সেবার মাধ্যমে কাস্টমাররের কাছে তাদের সার্ভিস পৌঁছে দেয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে সেবা এখানে একটি মেসেঞ্জার হিসেবে কাজ করে। যেখানে কাস্টমার এবং লেবার দুইজনই উপকৃত হন।
লেবার বা সার্ভিসিং প্রতিষ্ঠান সেবার সাথে এনগেজড থেকে তাদের তথ্য শেয়ার করে রাখেন। অন্যদিকে কাস্টমার রা তাদের প্রয়োজন ও লোকেশন অনুযায়ী সেবার মাধ্যমে সার্ভিস অর্ডার করে। এবং সেবা কাজ শুরু থেকে কমপ্লিট হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকে। এভাবে তারা তাদের সুবিধা গুলো সারা বাংলাদেশ প্রোভাইড করে যাচ্ছে।
সার্ভিস সমূহ
সেবার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইউজার দের ডিমান্ড অনুযায়ী সার্ভিস দেয়। এক নজরে দেখে নিন তারা বাংলাদেশে কি কি সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে-
- দৈনন্দিন ঘরোয়া সেবা প্রদান
- ইলেকট্রিশিয়ান সার্ভিস
- পানি ও কল মিস্ত্রি,
- হোম এনভায়রনমেন্টে বিউটিশিয়ান,
- কার্পেন্টার,
- রং মিস্ত্রি
- ইন্টেরিয়র ডিজাইনার
- ইনসেক্ট নিয়ন্ত্রণ,
- ঘর বা অফিস পরিষ্কার,
- বাসা ও অফিস বদল করার জন্য লেবার প্রদান ইত্যাদি
সেবার প্রতিটি সার্ভিস ভালভাবে যাচাইবাছাই করেই সরবরাহ করা হয়। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কোনও ইউজার তাদের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তাদের সার্ভিস গুলো অর্ডার করতে পারবেন।
আপনি চাইলে ওয়েবসাইটের কিংবা গুগল প্লে স্টোর থেকে সেবা নিতে পারবেন। তাছাড়া অ্যাপল অ্যাপ স্টোরেও এই পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
সেবা এক্স ওয়াই জেড ( sheba xyz )এর পরিধি
সমগ্র ঢাকায় ডেইলি লাইফে দরকারী সব ধরনের সার্ভিস প্রোভাইড করে যাচ্ছে্ন তারা। বিগত এক বছরে দেশের মধ্যে অলমোস্ট ৭৫,০০০ অর্ডার কমপ্লিট করেছে।
শুরুর দিক থেকেই সেবার ছিল প্রায় ৩৫,০০০ এরও বেশী রেগুলার ও ইরেগুলার কাস্টোমারস। তাছাড়া সেবার সাথে প্রথম দিক থেকেই কাজ করছে ১৬০০ এর অধিক সেবা প্রোভাইডার।
তাদের টার্গেট প্রতি বছরের ১০ লক্ষ কাস্টমার গেইন করায়। আর দশ হাজার সার্ভিস প্রোভাইডার এর সাথে যুক্ত হবার। ২০১৮ সাল থেকেই সমস্ত বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে সেবা এক্স ওয়াই জেড এর সার্ভিস।
এবং আশানুরূপ সাফল্য হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সেবার সার্ভিস দক্ষিণ এশিয়ার ৩টি দেশ- ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার এবং ভিয়েতনামে বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিশেষত্ব
সেবার অ্যাপের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল আপনি খুব দ্রুত ও সহজেই সার্ভিস অর্ডার করতে পারবেন। তাও আবার রাত দিন যে কোন সময়ে। সেবা অ্যাপের সর্বাধিক আকর্ষণীয় খাত হলো- আপনার বিল,পেমেন্ট,সার্ভিসের বিস্তারিত, সার্ভিস প্রোভাইডারের ডিটেলস, কতক্ষণ আপনার সাথে কাজ করেছে – এই সকল তথ্য আপনি অ্যাপের মাধ্যমেই জানতে পারবেন।
আর সেবা অ্যাপে যুক্ত করা হয়েছে নতুন নতুন সব ডিজাইন ও আধুনিক ফিচারস। ফলে সেবা এক্স ওয়াই জেড থেকে পরিষেবা নেয়ার এক্সপেরিয়েন্স হবে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ।
অর্জন
সেবা এক্স ওয়াই জেড সংস্থাটির কার্যক্রম প্রতি বছরে ই কয়েক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের মধ্যে সেবা শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। আর এখন দেশের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো স্তরের মানুষ তাদের সামর্থ্য ও চাহিদা অনুসারে সার্ভিস নিতে পারছে।
সেবার বর্তমান আছে ৩০.৩ লক্ষ এর মত সাবস্ক্রাইবড গ্রাহক রয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত ৮৬ এর অধিক সেক্টরে পরিষেবা দিয়ে এসেছে এবং আশা করছে এর থেকেও বেশি বিস্তৃত হবার।
২০১৮ সাল থেকে চালু করে ‘পরিষেবা পুরস্কার’। সেবা অ্যাপ-তার ব্যাপক সাফল্যের ধারায় নতুন আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করলো সেবা এক্স ওয়াই জেড।
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারী বিনিয়োগের উদ্যোক্তাদের রেগুলার ব্যবসায়ীক কাজে আরও সাফল্য নিয়ে আসতে সেবা এক্স ওয়াই জেড ব্রান্ড নিউ উদ্ভাবন ‘এস ম্যানেজার’ (sManager)। আর সেবা এস প্রো থেকে অর্ডার করলে থাকছে বাড়তি সুযোগ।
ভবিষ্যৎ
রাতারাতি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কখনও সফল হয় না। তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের বিনিয়োগ, পরিশ্রম, মেধার বিকাশ। এর পর ধৈর্য ও লেগে থাকার পর আসে কাঙ্ক্ষিত সফলতা।
সেবা যখন শুরু হয় তখন তারা ১০ বছরের টার্গেট নিয়ে এগোয়। তাদের কাজের গতি ধরে রাখে। ফলে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ অনলাইন সার্ভিসিং প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। শুধু মাত্র ৭০ জনের একটি টিম থেকে ও ১৬০০ সার্ভিস প্রোভাইডার এর সাহায্যে এগিয়ে চলা সেবার এখন লাখের অধিক ইউজার।
এর ভবিষ্যৎ মাইলফলক তাদের এস ম্যানেজার ও এস প্রো উদ্ভাবন। এছাড়াও অলরেডি ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে কাজ করার জন্য নেয়া হয়েছে যথাসম্ভব প্রস্তুতি। ২০১৯ সালেই কাজ শুরু হয়েছে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে সেবা পৌঁছে দেওয়ার।
আশা করা যায় শুধু দেশের মধ্যে নয়, দেশের গন্ডি পার হয়ে সেবা এক্স ওয়াই জেড (sheba xyz) আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানসম্মত সার্ভিস পৌঁছে দিতে পারবে। সেদিন বেশি দূরে নয় বলেই আমরা আশাবাদী।