সোশ্যাল কমার্স কি? স্মল বিজনেসের জন্য সোশ্যাল কমার্স টিপস

সোশ্যাল-কমার্স-স্মল-বিজনেসের-জন্য-সোশ্যাল-কমার্স-টিপস
Share This Post

গত কয়েক বছর ধরে সোশ্যাল কমার্স ছোট ও বড় সকল বিজনেসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সোশ্যাল কমার্স কি? সোশ্যাল কমার্স হলো, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যেকোনো প্রোডাক্টসের ডিরেক্ট ক্রয় বিক্রয়। কেনা, বেঁচার পুরো প্রসেস-ই যখন সোশ্যাল মিডিয়াতেই হয়ে থাকে তখন তাকে  সোশ্যাল কমার্স বলে। যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলিতে (Facebook, Instagram, TikTok, YouTube, Pinterest) এখন প্রায় সকল ব্র‍্যান্ডের-ই সোশ্যাল মিডিয়া বিজনেস প্রোফাইল আছে এবং বিজনেস ওয়েবসাইটও আছে।

এসব বিজনেস প্রোফাইলে তারা তাদের বিভিন্ন পণ্যের এডভার্টাইসিং করে থাকে, সেল পোস্ট দেয় এবং ডেলিভারি সার্ভিসও দিয়ে থাকে। মোটকথা, সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ওয়েবসাইটে তাদের ডিজিটাল শপ থাকে, যেখানে তারা অনলাইনেই বিভিন্ন প্রোডাক্টসের অর্ডার নেয় এবং সেল করে। সোশ্যাল কমার্সের অন্যতম সুবিধা হলো কাস্টমার এবং সেলার দুইজনের-ই টাইম বেঁচে যাচ্ছে এবং কাস্টমার স্মুথলি কেনাকাটা করতে পারছে।

স্মল বিজনেসের জন্য হেল্পফুল সাতটি সোশ্যাল কমার্স টিপস

সিলেক্ট রাইট প্ল্যাটফর্ম 

বর্তমানে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। জনপ্রিয়তা স্থানভেদে কম বেশিও হতে পারে। যেমন একেক স্থানে ফেসবুক ইউসার বেশি হতে পারে এবং অন্যস্থানে ইন্সটাগ্রাম ইউসার বেশি হতে পারে। আপনাকে বুঝতে হবে আপনার স্থানে কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ইউসার বেশি এক্টিভ। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি এক্টিভ ইউসার রয়েছে ফেসবুকে, তারপর টিকটক এবং ইন্সটাগ্রামে। এজন্য আগে প্ল্যাটফর্ম সিলেক্ট করুন, শুধুমাত্র একটি প্ল্যাটফর্মেই মার্কেটিং সীমাবদ্ধ রাখবেন না। চেষ্টা করবেন তিন, চারটি প্ল্যাটফর্মেই মার্কেটিং করতে।

মার্কেটিং করতে পারেন ভিডিও কন্টেন্ট, ইমেজ এবং রাইটিং কনটেন্ট এর মাধ্যমে। প্রোডাক্ট কে হাইলাইট করে বিভিন্ন ভিডিও, কাস্টমারের রিভিউ রাইটিং আকারে বা স্ক্রিনশট নিয়েও পোস্ট করতে পারেন। এবং বিজনেস প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট শেয়ার দিন।

অটোমেটিক রেসপন্স 

ফেসবুক মেসেঞ্জার চ্যাটবক্সের একটি অসাধারণ ফিচার হলো অটোমেটিক রেসপন্স। যখন কেউ কোনো প্রোডাক্টসের জন্য আপনার বিজনেস পেইজে নক করে তখন সাথে সাথেই আপনার রিপ্লাই দেওয়া পসিবল না, এজন্য মেসেজ কাস্টমাইজ করে সেট করে রাখুন, যেনো কেউ নক করলেই অটোমেটিক ভাবে কাস্টমার একটা রিপ্লাই পায়। কাস্টমাইজ টেক্সটে আপনি কিছু FAQ প্রশ্ন রাখতে পারেন যেমন, 

  • প্রোডাক্টসের প্রাইজ 
  • কোন কোন সাইজ এভেইলেবল আছে
  • ডেলিভারি সিস্টেম 
  • অথবা,কিভাবে আপনি তাকে হেল্প করতে পারেন।

ফেসবুক শপ

এক তৃতীয়াংশ ফেসবুক এক্টিভ ইউসার তাদের কেনাকাটা ফেসবুক থেকেই কমপ্লিট করে৷ তারা বিভিন্ন বিজনেস প্রোফাইল ঘুরে প্রোডাক্ট যাচাই করে, কোনো প্রোডাক্ট ভালো লাগলে সেটার জন্য প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন তারা ওই বিজনেস প্রোফাইল থেকেই কালেক্ট করে। অনেক সময় লাইক, কমেন্ট এমনকি শেয়ারও করে। তারপর সবকিছু ঠিক থাকলে তারা প্রোডাক্ট টি অর্ডার করে দেয়।

এজন্য ফেসবুকে প্রোডাক্টসের আলাদা আলাদা গ্যালারি রাখুন, প্রত্যেক পন্যের সাইজ, দাম, মেয়াদ, কিভাবে ব্যবহার করে সব কিছু প্রোডাক্টসের সাথে এড করুন। কেউ প্রশ্ন কমেন্ট করলে, ধৈর্য ধরে খুব পোলাইটলি উত্তর দিন। এমনকি বিভিন্ন প্রোডাক্ট ও সাজেস্ট করতে পারেন। কমেন্ট বক্সে কেউ পরামর্শ চাইলে ভুলভাল শুধুমাত্র নিজের লাভের জন্য কোনো প্রোডাক্ট সাজেস্ট করবেন না। তার চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা, বাজেট সবকিছু জেনে তবেই তাকে প্রোডাক্ট সাজেস্ট করুন। 

ইন্সটাগ্রামে প্রোডাক্ট প্রমোশন 

ইন্সটাগ্রামের অসাধারণ কিছু ফিচার আছে যেগুলির মাধ্যমে কাস্টমার ডিরেক্টলি আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে ইনফরমেশন পাচ্ছে এবং লিংকের মাধ্যমে ডিরেক্ট ওয়েবসাইটে চলে যেতে পারছে কেনাকাটা করতে। সেখানে তারা তাদের কার্টে প্রোডাক্ট লিস্ট দাম সহ চেক করতে পারছে।

এজন্য আপনাকে যা করতে হবে, তা হলো ইন্সটাগ্রাম শপ সেট করতে হবে যেটা হবে আপনার কাস্টমাইজড ডিজিটাল স্টোর। সেখানে প্রোডাক্টসের হাই কোয়ালিটির পিকচার আপ্লোড করুন এবং প্রোডাক্টসের সকল ইনফরমেশন এড করুন। আপনার ইন্সটাগ্রাম ওয়াল বিভিন্ন প্রোডাক্টসের পিকচার, এবং ভিজ্যুয়াল ভিডিও দিয়ে ফিলাপ করুন।

ব্র‍্যান্ড এওয়ারনেস 

সোশ্যাল কমার্স এতোটাই জনপ্রিয় যে, এখানে অডিয়েন্সের কাছে ট্রাস্টেবল হতে হলে আপনাকে একটা স্ট্রং ব্র‍্যান্ড ক্রিয়েট করতে হবে। এজন্য ব্র‍্যান্ড এর ইউনিক নেইম, লোগো, স্লোগান রাখা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। বিজনেস প্রোফাইল, ওয়েবসাইটে, প্রোডাক্টসের গায়ে লোগো এড করতে ভুলবেন না। যখন ইমেইল মার্কেটিং করবেন এবং প্রোডাক্টসের ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করবেন তখন স্লোগান এড করবেন অবশ্যই। ব্র‍্যান্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দিন যেনো অডিয়েন্সের মনে হয় আপনি তাদের জন্যই কেয়ার করেন, শুধু সেল করা-ই আপনার মূল উদ্দেশ্য নয়।

প্রোডাক্ট প্রমোশন 

মাঝে মাঝেই প্রোডাক্টসের জন্য প্রমোশনাল ভিডিও ক্রিয়েট করে পোস্ট করুন। এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার দের কে দিয়ে প্রোডাক্ট প্রমোট করিয়ে নিতে পারেন। বর্তমানে বেশিরভাগ ফেমাস সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সোশ্যাল কমার্স এর সাথে জড়িত। সোশ্যাল কমার্স কে তারা তাদের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবেই বিবেচনা করে। এই সুযোগ কে কাজে লাগান। 

এবং সবসময় আপনার আপ-কামিং প্রোডাক্ট সম্পর্কে এক্সাইটিং পোস্ট শেয়ার করুন। অডিয়েন্স অলওয়েজ নতুন কিছু ট্রাই করতে পছন্দ করে। এজন্য নতুন কি কি প্রোডাক্ট নিয়ে আসছেন, এক্সিস্টিং প্রোডাক্ট এ নতুন কি ফিচার আসছে এসব কিছু কে কেন্দ্র করে প্রমোশনাল ভিডিও অথবা রাইটিং কনটেন্ট পাব্লিশ করুন। 

হাই কোয়ালিটি পিন্টারেস্ট মার্কেটিং 

সোশ্যাল কমার্স পিন্টারেস্টেও বেশ জনপ্রিয়। এখানে পিন সিস্টেমের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রোডাক্টসের ইমেজ এবং ভিডিও এমন ভাবে প্রেজেন্ট করা হয় যাতে করে দেখেই অডিয়েন্স সহজেই এখানে থেকে কেনাকাটা করতে পারে। পিন্টারেস্ট পিন ফিচারে প্রোডাক্ট ইমেজ, ভিডিও এর পাশাপাশি প্রোডাক্টসের ডিটেইলস ইনফরমেশন এড করা থাকে।

আপনার পিন্টারেস্ট পিন কপি অপটিমাইজড করে পিন ডিসকভারেবল করুন। একটি ক্লিয়ার টাইটেল ক্রিয়েট করুন ১০০ শব্দের মধ্যে এবং ৫০০ শব্দের মধ্যে একটা সুন্দর ডেসক্রিপশন এড করুন। আপনি চাইলে এখানে বিভিন্ন লিংক ও এড করতে পারেন, জাস্ট মেইক শিউর করুন লিংক যেন ইজিলি লোড নিতে সক্ষম হয়।

পরিশেষে, মার্কেটিং, এবং শপিং সিস্টেম এখন আর ট্রেডিশনাল সিস্টেমের মধ্য সীমাবদ্ধ নয়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বিজনেস ও ডিজিটাল হয়ে গেছে। সোশ্যাল কমার্স এখন এতোটাই জনপ্রিয় এবং ইউসফুল যে অনেক বিজনেসের ফিজিক্যাল আউটলেট না থাকলেও তারা শুধু মাত্র সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বেশ প্রফিট পাচ্ছে সেই সাথে ফেমাস ব্র‍্যান্ড ও ক্রিয়েট করে ফেলছে। ট্রেডিশনাল কমার্স এর থেকেও এখন মানুষ সোশ্যাল কমার্স কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

বিজনেস কে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে নিয়ে যেতে সোশ্যাল কমার্স এর বিকল্প আর কিছু নেই। শুধুমাত্র সোশ্যাল কমার্স এর মাধ্যমেই আপনি খুব সহজেই পেয়ে যেতে পারেন ইন্টারন্যাশনাল বায়ার্স।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
বিজনেস রানিং অবস্থায় টাইম ম্যানেজমেন্টের ৭টি উপায়
Marketing

বিজনেস রানিং অবস্থায় টাইম ম্যানেজমেন্ট এর ৭টি উপায়

একজন উদ্দোক্তার ক্ষেত্রেও তাই। সময়ের সঠিক ব্যবহার ছাড়া, অর্থাৎ একটা প্রোপার টাইম ম্যানেজমেন্ট ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব। একটা সুনির্দিষ্ট ওয়ার্কিং শিডিউল ছাড়া কখনই বিজনেস গোল

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? - ৭টি টিপস
Marketing

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? – ৭টি টিপস

মা’কে ভালবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই কি মাকে ভালবাসি বলা হয়? কিংবা অতটা প্যাম্পার করা হয় যতটা সে ডিজার্ব করে?  আসলে,