সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হলো একটা বেস্ট এবং ইজিয়েস্ট্ ওয়ে যেকোনো বিজনেস কে একটা বিশাল নাম্বার অডিয়েন্সের সামনে তুলে ধরার। কারণ বর্তমানে ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ইউসার রয়েছে, যারা লাইফের যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল। যেমন, সমসাময়িক নিউজ থেকে শুরু করে, কমিউনিকেশন কেনাকাটা সবকিছুই তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে কমপ্লিট করে থাকে। বেশ কিছু পপুলার বিজনেস রয়েছে যারা এই সুযোগ টাকে কাজে লাগিয়ে তাদের ব্র্যান্ড কে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়েও ফেমাস করে তুলেছে। ব্র্যান্ড গুলির রয়েছে হিউজ পরিমাণ সাবস্ক্রাইবার এবং ফ্যান বেজ। তারপর ও কিছু কিছু ব্র্যান্ড রয়েছে যারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ ব্যর্থ। আপাতদৃষ্টিতে তাদের মনে হতে পারে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সব রুলস মেনে, বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি এপ্লাই করেই তো মার্কেটিং করা হচ্ছে, তাহলে রিচ কেন বাড়ছেনা?
হ্যা সব রুলস, স্ট্র্যাটেজি ফলো হয়তো করছেন কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেই হয়তো হয়ে যাচ্ছে বিশাল মিস্টেক যেটা আপনি জানেন ও না। এই ব্লগে এক্সপ্লেইন করবো সাতটি কমন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ভুল যেগুলি অবশ্যই এভয়েড করবেন সাক্সেস্ফুলি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার সময়।
‘যে সাতটি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ভুল এভয়েড করবেন’
প্ল্যান ছাড়া মার্কেটিং
অনেক ব্র্যান্ড কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে বেশি যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ভুল টি করে থাকে সেটা হলো কোনো প্ল্যান ছাড়াই কাজ করা। শুধুমাত্র অন্যদের ফলো করেই মার্কেটিং করা, পোস্ট আপলোড করা। এটা অনেকটা গাড়ি চালানো না শিখেই ড্রাইভ করার মতো ব্যাপার।
মার্কেটিং করার আগে অবশ্যই আপনাকে প্ল্যান করতে হবে, প্রোডাক্ট অনুযায়ী স্টেপ বাই স্টেপ স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হবে। আপনাকে মার্কেটিং অপরচুনিটি খোঁজে বের করতে হবে। কোন প্ল্যাটফর্ম গুলিতে মার্কেটিং করবেন, কি পোস্ট করবেন, পোস্ট গুলি কোথায় কোথায় যাবে। মান্থলি ক’টা পোস্ট হবে, টার্গেটেড অডিয়েন্স কে ফোকাস করা হচ্ছে কতোটা এই সবকিছুর কম্বিনেশনে সুন্দর সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরি করে ফেলুন। তারপর মার্কেটিং শুরু করুন। স্ট্র্যাটেজি ছাড়া মার্কেটিং করতে গেলে সেটা হবে শুধুই টাইম ওয়েস্ট।
অডিয়েন্স আইডেন্টিফাই না করা
মিলিয়ন মিলিয়ন সোশ্যাল মিডিয়া ইউসার রয়েছে যার মধ্যে সবাই আপনার প্রোডাক্ট এর উপযুক্ত কাস্টমার নয়। টার্গেটেড কাস্টমার সম্পর্কে প্রোপারলি না জেনে মার্কেটিং করা আরেকটি কমন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ভুল। আপনি গণহারে মার্কেটিং করতেই পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার অনেকটা টাইম ওয়েস্ট হবে এবং সাক্সেস্ফুল হওয়ার সম্ভাবনা ও অনেক কম।
এজন্য, অডিয়েন্স সম্পর্কে ভালো করে রিসার্চ করুন, তাদের ইনফরমেশন গেদার করুন। কারা আপনার প্রোডাক্টের জন্য উপযুক্ত কাস্টমার। কোথায় সেলিং অপরচুনিটি বেশি এসব কিছু আইডেন্টিফাই করুন।
ফলোয়ার্স কেনা
আমরা সবাই জানি ফলোয়ার্স কেনা সকল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গাইডলাইনের বিরুদ্ধে। এটা এক প্রকার ক্রাইম। কিন্তু যখন একটা লম্বা সময় ধরে পেইজ বা প্রোফাইলে ফলোয়ার্স কম থাকে তখন অনেকেই লোভে পড়ে ফলোয়ার্স কিনে থাকে। এটা সাময়িক ভাবে আপনাকে কিছু ফলোয়ার্স দিবে ঠিকই, কিন্তু লং-টার্মে আপনি আপনার বিজনেসের ক্ষতি-ই করছেন। কারণ ফলোয়ার্স কেনা ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম এলগরিদম এর বিরুদ্ধে যায়।
যখন আপনি কোনো পোস্ট করেন তখন প্রথম পর্যায়ে এটি খুব অল্প সংখ্যার অডিয়েন্সের সামনে শো করে৷ যখন ম্যাক্সিমাম অডিয়েন্স এটা লাইক করে এবং কমেন্ট করে তখন ফেসবুক এলগরিদম ভাবে পোস্ট টা অনেক ভালো, হেল্পফুল এবং এটা আরো বেশি অডিয়েন্সের সামনে শো করে। এইভাবে মূলত যেকোনো পোস্টের রিচ বাড়ে।
এখন আপনি হয়তো কিছু ফলোয়ার্স কিনলেন, কিন্তু তারা আপনার পোস্ট পছন্দ করছেনা এবং লাইক কমেন্ট ও দিচ্ছেনা, আল্টিমেটলি ক্ষতি আপনার ই হচ্ছে। তাছাড়া, কেনা ফলোয়ার্স থাকলে ফেসবুক এলগরিদম ব্যর্থ হয় আপনার পোস্ট টি অরিজিনাল ফলোয়ার্সের ফিডে শো করতে।এই কেনা ফলোয়ার্স থেকে সেইফ থাকার জন্য ফেসবুক প্রায় দুই বিলিয়ন ফেইক একাউন্ট রিমুভ করেছে। এজন্য ফলোয়ার্স কেনা থেকে বিরত থাকুন।
অপ্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার
সোশ্যাল মিডিয়ায় পপুলারিটি পেতে হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের বিকল্প নেই। আপনার ব্র্যান্ড কে যেকোনো ট্রেন্ডি টপিকের সাথে এড করে, ট্রেন্ডি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সহজেই অনেক বেশি অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারেন। এটা যেমন খুব সহজ একটি ওয়ে বেশি সাবস্ক্রাইবার পাওয়ার ঠিক তেমনি ভুল হওয়ার পসিবিলিটিও অনেক। এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ভুল টি অনেকেই করে থাকেন।
ভুল হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রোডাক্ট পোস্ট আপ্লোড করে থাকেন, তাৎক্ষনিক পোস্ট ডিলিট করেও লাভ হয়না। তখন পজিটিভ ভাবে রিচ বাড়ার চেয়ে নেগেটিভিটি ছড়িয়ে পরে। এজন্য হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন।
কমেন্ট সেকশন সম্পর্কে কেয়ারলেস
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলির কমেন্ট সেকশন হলো একটা বেস্ট ওয়ে অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট থাকার এবং পোস্টের রিচ বাড়ানোর। কারণ ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম এলগরিদম পোস্ট বুস্ট করে অনেক বেশি কমেন্ট এর ভিত্তিতে। এছাড়া ও কমেন্ট বক্সে অডিয়েন্সের প্রশ্নের উত্তর, সমস্যার সমাধান দিলে অডিয়েন্সের সাথেও স্মুথ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়।
অনেক ব্র্যান্ড-ই কমেন্ট বক্স সম্পর্কে এওয়ার নয়, এবং তারা অডিয়েন্সের কমেন্ট ইগ্নোর করে,যেটা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ভুল এবং বিজনেসের লসের জন্য অনেকটা দায়ী।
যখনই ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট কে ফোকাস করে পোস্ট দিবেন, কমেন্ট বক্স সবার জন্য উন্মুক্ত রাখবেন, এবং চেষ্টা করবেন সবার কমেন্টের ইনফরমেটিভ রিপ্লাই দিতে।
নেগেটিভ কমেন্ট ডিলিট
অনেক সময় দেখবেন যে, অনেক ব্র্যান্ড নেগেটিভ কমেন্ট পাচ্ছে, বা কোনো পার্টিকুলার অডিয়েন্সের সাথে তাদের বাজে এক্সপেরিয়েন্স হচ্ছে এবং সেগুলি তারা ডিলিট করে দিচ্ছে।
এটা মোটেও করা উচিত না, ডিলিট করে দিলে অডিয়েন্সের মনে ধারণা হয় যে, সমস্যা টা ব্র্যান্ডের-ই। অডিয়েন্সকে এটা শো করুন যে, আপনার হাইড করার মতো কিছু নেই। এজন্য নেগেটিভ কমেন্ট গুলো খুব সাবধানে ডিল করুন। কেউ কমেন্ট বক্সে আজেবাজে কিছু লিখলে, বাজে রিভিউ দিলে, ঠান্ডা মাথায় তাকে থ্যাংকস দিন তার এডভাইসের জন্য, এবং বলুন খুব শীগ্রই প্রব্লেম গুলো ফিক্স করা হবে। আর যদি অনেক বেশি টক্সিক হয় জাস্ট ইগ্নোর করুন।
বোরিং এক্টিভিটিস
বিজনেস পেইজে শুধু মাত্র প্রোডাক্ট পিকচার, প্রাইস এগুলো এড থাকলে অডিয়েন্স নরমালি ইন্টারেস্টেড হয়না। এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ভুল অনেক ব্র্যান্ড ই করে থাকে। শুধুমাত্র প্রোডাক্ট পোস্ট এবং প্রাইস উল্লেখ করেই পোস্ট আপ্লোড করে। যার ফলে পোস্ট তেমন রিচ হয়না।
ইউনিক এবং এট্রাক্টিভ ক্যাপশনে পোস্ট আপ্লোড করুন। নতুন নতুন কি ফিচার এড হয়েছে, কেমন বেনেফিট পাবে এসব কিছু হাইলাইট করুন। মাঝে মাঝে রিল, ফানি ভিডিও আপ্লোড করবেন। লাইভে ডিরেক্ট কমিউনিকেট করবেন। মোটকথা, বোরিং হওয়া যাবেনা।
শেষকথা, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলি গ্রেট একটা ওয়ে ব্র্যান্ড,বিজনেস প্রমোট করার এবং সেল বাড়ানোর। এখানে মার্কেটিং করে যেকোনো বিজনেস অল্প সময়েই ফেমাস হতে পারে৷ যারা এখনো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ সাক্সেস হতে পারছেন না, তারা উপরের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ভুল গুলি ভালো করে এনালাইসিস করুন। ভুল এভয়েড করে সঠিক ভাবে মার্কেটিং করুন, সফলতা আসবেই।