একজন মানুষ যখন অনেক স্বপ্ন নিয়ে উদ্যোক্তা হবার পথে হাটতে শুরু করে তখন তাকে সামাজিক ,পারিবারিক ,অর্থিক ভাবে অনেক ধরনের সমস্যা ঘেরাও করে রাখে ।কিন্তু মানুষ চাইলেই নিজের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি দিয়েই সেসব সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে । উদ্যোক্তা হবার পথে যে সব সমস্যার সম্মুখীন তাকে হতে হয় এবং একজন উদ্যোক্তা কিভাবে এসব সমস্যা সমাধান করবে সাথে উদ্যোক্তা জীবনে চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে মোকাবেলা করবে তা ই আজ আমরা আলোচনা করবো –
১. ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে দ্বিধা –
কখনোই বিজনেস এর পরিকল্পনা নিয়ে বেশি সময় নষ্ট করবেন না। বেশী ভাবনা আপনাকে দ্বিধায় ফেলতে পারে যেমনঃ অনেকের মাথায় ব্যবসার চিন্তা আসবার পর আরেকটা চিন্তা মাথায় আসে যে একই আইডিয়া নিয়ে অনেকে ভাবছে অথবা মার্কেটে কম্পিয়টিটর বেশী এইরকম নানা আশঙ্কায় দেখা যায় ব্যবসা শুরুই করা হয় না তখন অনেকেই সেই বিজনেস আইডিয়া থেকে সরে আসেন বা গিভ আপ করেন বা অন্য পরিকল্পনার কথা ভাবেন।
এভাবে ভাবতে ভাবতে আর কনফিউশন নিয়ে অনেক গুলো সময় নষ্ট হয়ে যায় । সুতরাং এত ওভার থিংকিং বাদ দিয়ে কাজ শুরু করে দিন ।
২. অর্থই অনর্থের মূল
আমরা সবাই এই নীতি বাক্যের সাথে পরিচিত। বেশিরভাগ উদ্যোক্তা তাদের মূল লক্ষ্য অল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জন করা। যার কারনে চাইলেও আপনি এই লক্ষ্য নিয়ে বেশি দূর আগাতে পারবেন না। কারন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা একটি কঠিনতম পথ যা আপনাকে ভবিষ্যতে দুর্বল করে তুলতে পারে। বিজনেসে অনেক ধরনের আপ্স ডাউন্স থাকে তখন হয়তো বা আপনাকে অনেকটা পথ কঠিনভাবে পাড়ি দিতে হবে যেখানে কোন উপার্জন থাকবে না।
তখন আপনি হতাশ হয়ে যেতে পারেন এবং এক্ষেত্রে অনেকে বিজনেস বন্ধ করে দেয়ার মত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। কিন্তু আপনি যদি অধিক অর্থকে প্রাধান্য না দিয়ে আপনার কোম্পানীর গ্রোথ এর দিকে নজর দেন এবং এটাকে আস্তে আস্তে বড় করার প্লান করেন তাহলে আর আপনার হতাশ লাগবে না । একজন বিজনেস ম্যানের একজন পজিটিভ চিন্তার মানুষ হওয়া অনেক জরুরী তাই অর্থকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সফলতার প্রতি নজর দিতে হবে।
৩. মার্কেট ভ্যালু যাচাই করা
আপনি যখন কোন প্রোডাক্ট নিয়ে মার্কেটে আসেন তখন আপনি অবশ্যই চাইবেন সেই প্রোডাক্টটি বড়ভাবে লঞ্চ করতে। তাই আইডিয়া আসার সাথে সাথেই আপনাকে সেই আইডিয়া বিগ মার্কেটে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। অথবা নিজেকে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন যে আপনার আইডিয়া ভবিষ্যতে মার্কেটে প্রোডাক্ট ভ্যালু তৈরী করতে পারবে কিনা? তাহলে আপনার টার্গেট ভোক্তারা অবশ্যই আপনার প্রোডাক্ট কিনবে। এটা উদ্যোক্তা জীবনে চ্যালেঞ্জ এর মধ্যেই পড়ে।
৪. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
ব্যবসায় পরিচালনায় প্রতিনিয়ত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার। যা কিনা অবশ্যই তিন থেকে চার বছরের পরিকল্পনা হতে হবে। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরে আপনি কি কি করবেন আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানকে কোথায় দেখতে চান ? এই পরিকল্পনা গুলো যদি আপনি করে না রাখেন তাহলে আপনাকে পদে পদে হোচট খেতে হবে অথবা একটা সময় পর আপনি থেমেও যেতে পারেন যেহেতু আপনি কোন লক্ষ্য স্থির করে পথা চলা শুরু করেননি
৫. আর্থিক হিসাব ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশের বেশীরভাগ ব্যবসায়ীরা আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর উদাসীন। তারা মনে করে থাকে ক্ষুদ্র ব্যবসাতে হিসাবের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই আর্থিক হিসাব গুরুত্বপুর্ন । একটা লম্বা সময় হিসাব না রাখতে রাখতে অনেক ব্যবসাকেই পরবর্তীতে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে দেখা যায় । একজন ব্যবসায়ীর অবশ্যই হিসাবি এবং মিতব্যায়ী হওয়া জরুরী
যদি আপনি চান যে আপনার ব্যবসায় সফলতা লাভ করুক তাহলে হিসাব রাখার কোন বিকল্প নেই । হিসাব ব্যবস্থাপনা আপনাকে বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে ।
৬. টাইম ম্যানেজমেন্ট
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে “Time is Money” ব্যবসার ক্ষেত্রেও টাইম ইনভেস্টমেন্ট করা মানি ইনভেস্টমেন্ট করার মতই । একজন উদ্যোক্তার টাইম সেন্স এবং টাইম ম্যানেজমেন্ট থাকা অনেক জরুরী । অনেক উদ্যোক্তার মধ্যেই দেখা যায় তারা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় খুব বেশী সময় দিতে ফেলে যে অন্য যেকোন কাজে টাইম ইনভেস্ট করতে ভুলে যায় ।তাই প্রায়োরিটি ওয়াইজ টাইম ভাগ করে নিতে হবে ।
৭. সেট মার্কেটিং স্ট্রাটেজি
মার্কেটে নতুন কিছু নিয়ে আসতে চাইলে তার জন্য মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার প্রোডাক্ট কী এবং সেটা কিভাবে আপনার কাস্টমারদের সার্ভিস দিবে , এসব প্রশ্নের উত্তর দিবে আপনার মার্কেটিং স্ট্রেটেজি। কিন্তু আমরা উদ্যোক্তারা অনেক সময়ই ভুল মার্কেটিং স্ট্রাটের্জি গ্রহন করে থাকি। যার কারনে আমাদের টার্গেট পূরন হয় না। তাই মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সেট করার পূর্বে স্ট্রাটের্জি নিয়ে প্রোপার এনালাইসিস করা প্রয়োজন । এবং সঠিক মার্কেটং স্ট্রেটেজি সেট করা উচিত ।
৮. আপনার প্রোডাক্ট সিলেক্ট করুন –
কী ধরনের প্রোডাক্ট সেল করলে আপনি প্রফিট জেনারেট করতে পারবেন সেটা আপনাকে আগে থেকে নির্ধারন করে রাখতে হবে। যদি আপনি নিশ সিলেকশনে ভুল করে থাকেন তাহলে আপনার পুরো কাজটাই বৃথা যাবে। আপনি নিশ সিলেকশনে অভিজ্ঞ না হলে এক্ত এরিয়াতে কারা বেশী অভিজ্ঞ তাদের কাছে থেকে পরামর্শ নিন। মার্কেটিং রিসার্চ বা এনালাইসিস করে আপনি আপনার প্রোডাক্ট সিলেক্ট করতে পারেন ।
উদ্যোক্তা জীবনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে শেষকথা
উদ্যোক্তা জীবনে চ্যালেঞ্জ এর শেষ নেই কিন্তু এদের সম্মুখীন করা অসম্ভব কিছুনা । শুধু মাত্র পজিটিভ চিন্তা, সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, টাইম ম্যানেজমেন্ট এসব কিছু মেইনটেইন করেই আপনি সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন ।
অর্থাৎ অল্প সময়ে অধিক উপার্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে সময় এবং ধৈর্য্য নিয়ে এই পথে হাটুন তবেই আপনার সফলতা নিশ্চিত ।
ইংরেজী আরো একটি বিখ্যাত প্রবাদ দিয়ে শেষ করছি “ slow and steady wins the race story “
পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।