পাঠাও (Pathao) – বাংলাদেশী জনপ্রিয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম

পাঠাও
Share This Post

পাবলিক পরিবহনের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে রাইড শেয়ারিং অনেক বেশি জনপ্রিয়। গত দশকের শুরু থেকে গ্লোবালি এই সার্ভিসটি পপুলার হলেও বাংলাদেশে ২০১৬ সালের দিকে পাঠাও এবং উবারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের যাত্রা শুরু করে। ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তায় বিশেষ করে মোটসাইকেলের মাধ্যমে এই সেবা ক্রমেই মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যায়, এর পাশাপাশি আয়ের বিকল্প উপায় খুঁজে পায় লক্ষ লক্ষ কর্মহীন মানুষ। রেভুলেশন এর যাত্রাকে বাংলাদেশী মানুষের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় করতে সক্ষম হয় দেশীয় টেক স্টার্টআপ পাঠাও।

ব্যাকগ্রাউন্ড

২০১১ সালের কথা রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এর ছাত্র সিফাত আদনান পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা এসেছেন চাকরি করতে। কাজিনের সূত্রে পরিচয় হয়েছিলো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হুসেইন মুহাম্মদ ইলিয়াসের সাথে। দু’জনের দেখা হতো খুব কমই। যখনই কথা হতো কথা ঘুরতো সময়ের চাহিদা মিটানো এবং “নতুন কিছু” করা নিয়ে। দু’জনেরই চাকরিতে অনীহা।

২০১৩ সালের দিকে তারা একটি নতুন স্টার্ট আপ নিয়ে এলেন নাম – “ডুগডুগি”। কাজ অনলাইনে গান শোনানো ( মিউজিক স্ট্রিমিং সাইট)। ঢাকার সংগীতপ্রেমীরা ওয়েবসাইটটি পছন্দ করতেও শুরু করেন। সে বছর স্টার্ট আপ উইকএন্ডে দ্বিতীয় সেরা স্টার্ট আপের পুরস্কার পায় ডুগডুগি। কিন্তু,এত কিছু করেও লাভের টাকা ওঠানো যাচ্ছিলো না। অগত্যা বন্ধ হয়ে যায় ডুগডুগি।

উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর আবার ভাবতে লাগলেন সিফাত এবং ইলিয়াস। এবার তারা নিয়ে এলেন এক ডেলিভারি সার্ভিস। ঢাকা শহরের জ্যামের মধ্যে সহজে বাইসাইকেল ব্যবহার করে কিভাবে পণ্য ডেলিভারি দেয়া যায় তার সমাধান খুঁজতেই বেরিয়ে এলো এই উদ্যোগ। নাম দেয়া হল, ”পাঠাও”। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পরিচিতজনদেরকে ডেলিভারি সার্ভিস প্রদান করার মধ্যেই এই সার্ভিস সীমাবদ্ধ ছিলো। তখন বাইসাইকেল ব্যবহার করে পার্সেল পৌঁছে দেয়া হতো।

এর ভেতরেই ইলিয়াসের পরিচয় হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি তরুন ফাহিম সালেহর সাথে। সেই সময় বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিনই হরতাল-অবরোধ লেগে থাকত। হরতালের তথ্য জানাতেই ইলিয়াস খুলে বসেন istomorrowhortal.com নামের এই ওয়েবসাইট। ফাহিম সালেহ এই ওয়েবসাইটটি দেখতে পেয়ে এর পেছনের মানুষটির সাথে আলোচনা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ইলিয়াসের সাথে কথা বলার পর ফাহিম সালেহ পাঠাও সম্পর্কে জানতে পারেন। এভাবেই তিনি এই প্ল্যাটফর্ম এর সাথে যুক্ত হয়ে যান। 

পাঠাও

পাঠাও ডেলিভারি সার্ভিস কিছুদিন চলার পর উদ্যোক্তারা বুঝতে পারলেন যে প্রতিদিন মানুষের পার্সেল পাঠানোর দরকার পড়ে না। কিন্তু, ব্যবসাও বাড়ানো দরকার। এই চিন্তা থেকেই তাঁদের মাথায় এলো ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা জ্যামের কথা। জ্যামে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা নষ্ট হওয়ার কথা।তাঁরা দেখলেন আটকে থাকা সারি সারি গাড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে মোটরবাইক ঠিকই চলে যাচ্ছে। এই থেকেই তাঁদের মাথায় আইডিয়া এলো,মোটরবাইকে যাত্রী পরিবহন করার।

২০১৬ সালে মাত্র পাঁচটি মোটরবাইক নিয়ে যাত্রা শুরু করে যাত্রী পরিবহন সার্ভিস। অফিস ছিলো বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে। প্রথম প্রথম ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অর্ডার নিয়ে সার্ভিস দেয়া হতো। ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ চালু হলো পাঠাও অ্যাপ, ২০১৭ তে কার এবং ২০১৮ তে রেস্টুরেন্ট ডেলিভারি সার্ভিস পাঠাও ফুড চালু হয়। 

পাঠাওয়ের সার্ভিস

বর্তমানে পাঠাওয়ের ৭ টি সার্ভিস এক্টিভ আছে।

  • বাইকঃ– পাঠাওয়ের রাইড শেয়ারিং সার্ভিস।
  • পার্সেলঃ- অন ডিমান্ড পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস।
  • কারঃ- নিরাপদ এবং আরাম দায়ক ভ্রমনের জন্য এই সার্ভিস।
  • কুরিয়ারঃ- বিজনেস পারপাসে এবং দূরে ডেলিভারির জন্য।
  • ফুডঃ- অন ডিমান্ড ফুড ডেলিভারি সার্ভিস।
  • শপঃ– অনলাইন শপিং সার্ভিস প্রদানের মাধ্যম।
  • হেলথঃ- সহজে হেলথ সার্ভিস প্রদান করার প্ল্যাটফর্ম।

এছাড়া এই প্ল্যাটফর্মটি সামনে ফিন-টেক সার্ভিস আনার চেষ্টা করছে। যাঁর মাধ্যমে গ্রাহকেরা “পে-লেটার” অপশনটি পাবেন। বর্তমানে তাঁদের এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দেশের সেবা ছাড়িয়ে বর্তমানে নেপালেও তাঁদের রাইড শেয়ারিং সেবা দিয়ে আসছে। 

পাঠাওয়ের অর্জন

বর্তমানে পাঠাওয়ের –

  • প্রায় ৮০ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। 
  • তিন লাখের বেশি চালক ,ফুড ডেলিভারি ম্যান যুক্ত আছেন।
  • ১০ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্টের সাথে তাঁদের চুক্তি আছে।
  • ৩০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পাঠাওয়ের সার্ভিস গ্রহন করে থাকেন। যাঁর ভেতরে প্রায় ৪০% অর্থাৎ, ১২০০০ ই নারী। 
  • বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনিং হাউস “আর্টিসান”র সাথে পাঠাওয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। 
  • উপায়ের ‘ক্যাশ কালেকশন’ সার্ভিসেও সম্প্রতি তাদের নিজেদেরকে যুক্ত করেছে। 
  • ২০১৯ সালে ২৯ বছর বয়সে বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের ৩০ বছর বয়সের নিচে থাকা উদ্যোক্তাদের নিয়ে করা “Forbes 30 under 30″ এর গৌরব অর্জন করেন পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস হোসাইন।

বিনিয়োগ

পাঠাও

এ পর্যন্ত প্রায় ১৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ফান্ডিং পেয়েছে এই প্ল্যাটফর্মটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তারা এই ফান্ডিং পায়।

এখন পর্যন্ত যেসব কোম্পানি স্টার্টআপটি’তে ইনভেস্ট করেছেন তারা হলেনঃ-

১। স্টার্ট আপ বাংলাদেশ লিমিটেড।

২। ক্লিয়ারস্টোন।

৩। অল্টার গ্লোবাল।

৪। ব্যাটারি রোড ডিজিটাল হোল্ডিংস।

৫। গো-জেক।

৬। ওপেনস্পেস।

৭। দ্যা ওসিরিস গ্রুপ।

৮। আরসি ভেঞ্চারস।

নেটওয়ার্কিং 

ইনভেস্টমেন্ট পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন টাইপের দেশি-বিদেশি কোম্পানি লিস্টে নিজেদের নাম তুলেছে। এর ভেতর আছে-

  • বাংলাদেশ ই-কমার্স কোম্পানিজ।
  • ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডেড কোম্পানিজ।
  • ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানিজ।
  • এশিয়া-প্যাসিফিক কোম্পানিজ ইত্যাদি।

ভবিষ্যৎ

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত যে পাঠাওয়ের পথচলা সবসময় মসৃণ ছিল এমনটা কোনভাবেই বলা যাবে না। 

ইনভেস্টর গো-জেক পাঠাওয়ে ইনভেস্ট করা তাদের ১৪৪ কোটি টাকা ক্ষতির খাতায় তুলেছে। এছাড়াও তাদের এপপ্স থেকে গ্রাহকের তথ্য চুরির অভিযোগ এসেছে। লাভ-ক্ষতির হিসাব মিলাতে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। বিরাট বড় ঝটকা হয়ে এসেছে ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ’র খুন হয়ে যাওয়া। 

এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ তাদেরকে সামাল দিতে হয়েছে। সব সামলে পাঠাও আবার নতুন করে চলতে শুরু করেছে। গত বছর নভেম্বরে সিইও হিসেবে ফাহিম আহমেদকে নিয়োগ দেয়। প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন ইলিয়াস সিইও’র পদ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন এডভাইজরি কমিটিতে। 

তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সবচাইতে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ফিন-টেক। এর আওতায় পাঠাও নিয়ে আসছে “পে-লেটার” সার্ভিস। যাঁর মাধ্যমে এর ব্যবহারকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে বিল না দিয়ে পরেও বিল দিতে পারবেন।

পাঠাওয়ের সবগুলি ব্যবসাই এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখেছে। নতুন পদ্ধতিতে তা আরো বেশি লাভ করবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা। 

শেষকথা

পাঠাও সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে কেমন লাগলো? আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

পাশাপাশি পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন
Marketing

ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন?

আপনার বিজনেস নিশ কি হবে? কি নিয়ে কাজ করবেন? বা কোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিই এপ্লাই করবেন। সব কিছু সিলেক্ট করার আগে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট ফ্যাক্ট হচ্ছে কম্পিটিটর

প্যাশনকে প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড সাকসেস এ পরিণত করুন
Marketing

প্যাশনকে প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড সাকসেস এ পরিণত করুন

জীবনে সাকসেসফুল হতে হলে অবশ্যই আপনাকে আপনার যেকোনো ধরনের কাজের প্রতি দৃঢ় প্যাশন গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সকলের কিছু ভালো লাগার জিনিস রয়েছে যেমন ছবি আঁকা।