প্রখ্যাত ব্যাক্তিত্ব সৈয়দ মুজতবা আলী বলতেন “বাংলাদেশীদের নাকি বই কিনতে খুব অনীহা কারণ বই পড়ে সময় নষ্ট করার মত সময় নাকি তাদের নেই” আসলেই কি তাই? এখনও শুনি অনেকেই বই পড়া মানে ধরেই নেন যে সাহিত্য কিংবা উপন্যাস পড়া। কিন্তু যখন আপনার নিজে কিছু করার প্রত্যয় থাকে বা উদ্যোক্তামনা হয়ে থাকেন তখন কিন্তু আপনার জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। একজন উদ্যোক্তা ততক্ষন সফল নয় যে পর্যন্ত না তিনি প্রত্যেকটি বিষয়ে পরিপূর্ণ অভিজ্ঞ হয়ে উঠছেন। তার মানে এই যে, আপনি প্রতিদিন কোন না কোন নতুন চ্যালেঞ্জ এর সাথে সম্মুখীন হচ্ছেন।
যেহেতু জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বই ছাড়া বিকল্প নেই, তাই আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার গুনাবলীকে আরো বেশি পরিমানে অভিজ্ঞতা দিতে বই আপনাকে অনেকাংশে সাহায্য করতে পারবে। তাই উদ্যোক্তাদের জন্য ১০টি বইয়ের তালিকা বর্ণনা করছি যা আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার গুনকে আরো অনেক বেশি ফুটিয়ে তুলবে।
১. জিরো টু ওয়ান
২০১৪ সালে প্রকাশিত সফল উদ্যোক্তা “পিটার থিয়েল এবং ব্লেক মাস্টার্সের” লেখা “জিরো টু ওয়ান” বইটি তাদের মধ্য একটি। কীভাবে আপনার ইউনিক ও ইনোভেশনের মাধ্যমে আপনার আইডিয়াকে বাস্তবায়ন করবেন এবং আপনার স্টার্টআপ বিজনেসের জন্য কীভাবে পজিটিভিটি ধরে রাখবেন সেই কথাই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বইটি পড়বার মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা কিভাবে ইউনিক আইডিয়া দিয়ে তার ফিউচারকে সেট করবেন এবং তা মনোপলিতে কনভার্ট হবে সেটাও বলা হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ে স্টার্টআপে কিভাবে বিজনেসের ভবিষ্যতের জন্য ফুটপ্রিন্ট রাখতে পারে তার ধারনা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে, সাথে একটি বিজনেসের প্রসারের জন্য যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ বাড়াতে আপনাকে সাহায্য করবে এই বইটি।
২. রিচ ড্যাড পুর ড্যাড
“রবার্ট কিয়োসাকি” লেখা “রিচ ড্যাড পুর ড্যাড” বইটি প্রকাশিত ১৯৯৭ সালে। এই বইটিতে উদ্যোক্তাদের ফাইন্যান্সিয়াল লিটারিসি, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স ও ইনভেস্টমেন্টের উপর জোর দিতে বলা হয়েছে। বইটি মূলত কিয়োসাকির জীবন থেকে লেখা হয়েছে, বলা হয়েছে যে একজন ধনী ও মধ্যবিত্ত বাবার চিন্তার মধ্য পার্থক্য রয়েছে। এছাড়াও তার মতে ধনীরা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি লিটারেসি ও ইন্ডিপেন্ডেসের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কিলকে ডেভেলপ করে তুলে। অন্যদিকে মধ্যবিত্তের ঘরের একজন বাবা তাদের সন্তানদের শিক্ষা শেষে আর্থিক উন্নতির জন্য চাকরী করবার কথা বলে থাকে। কারন তারা ইনভেস্টেমেন্টের মতো রিস্ক নিতে চান না। আপনি এই বইয়ের মাধ্যমে নিজেকে ইনভেস্টমেন্টের রিস্ক নেবার আগ্রহগুলোকে খুঁজে পাবেন।
৩. হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস এন্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল

আমেরিকার বিখ্যাত লেকচারার ও লেখক “ডেল কারনিগে” লেখা হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস এন্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল ১৯৩৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম প্রকাশিত হয়। ইহা একটি পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট ও লাইফ মেন্যুয়াল হিসেবে ধরা হয়। নিজের মধ্য লিডারশিপ স্কিল ডেভেলপ করতে এবং নিজের ব্যবহার দিয়ে অন্যদেরকে কীভাবে প্রভাবিত করা যায় সেই সকল গুণাবলী এখানে বর্ননা করা হয়েছে। একজন সফল উদ্যোক্তার প্রয়োজনীয় সকল গুণ প্রকাশে এই বই আপনাকে আরো নিখুত করে তুলবে।
৪. স্টার্ট উইথ ওয়াই
২০০৯ সালে “স্টার্ট উইথ ওয়াই” বইটি সাইমন সিনেক দ্বারা প্রকাশিত হয়। এই বইটিতে লেখক একটি গোল্ডেন সার্কেল তৈরী করেছেন যেখানে একজন উদ্যোক্তা তিনটি প্রশ্নের সম্মুখীন হনঃ কি, কিভাবে এবং কোথায়। তার মতে একজন উদ্যোক্তা যদি কি থেকে প্রশ্ন শুরু না করে সরাসরি কোথা হতে প্রশ্ন শুরু করে তাহলে তার কাক্ষিত ফলাফল জলদি অর্জন করতে পারবে এবং তার কাঙ্খিত লক্ষ্য বেশি পরিষ্কার হয়ে উঠবে। তাই একজন উদ্যোক্তাকে ভুল প্রশ্নের দিকে না গিয়ে সরাসরি সঠিক প্রশ্নে আগাতে হবে লেখকের মতামত এমনটাই প্রকাশ করেছেন এই বইটিতে। এছাড়াও তিনি বইটিতে বলেছেন যে, একজন কাস্টমার প্রোডাক্ট কিনতে তখনই আগ্রহী হয় যখন কাস্টমার জানতে পারে যে কেন প্রোডাক্টটি তৈরী করা হয়েছে। তাছাড়া উদ্যোক্তার তার নিজস্ব পনের উপর প্রবল বিশ্বাস সেল রেট আরো বৃদ্ধি করে তুলে
৫. দ্যা সেভেন ডে স্টার্ট আপ
লেখক “ড্যান নরিস” ২০১৪ সেপ্টেম্বর মাসে “ দ্যা সেভেন ডে স্টার্ট” বইটি প্রকাশ করেন। ড্যান নরিস তার জীবনের দীর্ঘ সাত বছর ধরে করতে থাকা পরিশ্রমের পর সফলতা পাবার ঘটনাকেই এই বইটিরে প্রকাশ করেছেন। লেখকের মতে একজন উদ্যোক্তাকে তার লক্ষ্য, আত্নবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রম তাকে সফল করে তুলতে পারে কিন্তু অবশ্যই সেই পরিশ্রম স্মার্ট হতে হবে এবং ইউনিক আইডিয়া বিল্ড আপ করবার মাধ্যমে কীভাবে কাস্টমারদের আকর্ষণ করা যায় সেটা মাথায় রাখতে হবে। বইটিতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বোঝাতে চেয়েছেন একজন চাকুরীজীবি পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে পারেন না কিন্তু একজন উদ্যোক্তা তা ইউনিক আইডিয়া দিয়ে পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে পারে।
৬. দ্যা লীন স্টার্টআপ
২০১১ সালে প্রকাশিত হওয়া “এরিক রিয়েসে” দ্যা লীন স্টার্টআপ বইটি নিয়ে আসেন। তার বইটিতে কেন একটি বিজনেস ছোট হওয়া উচিত এবং সুযোগ বুঝে কাজ করবার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া কোন একটি স্টার্টআপ ফ্লপ করে, বিষয়গুলোকে কীভাবে বের করা যায় এবং সেগুলো কাটিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় এখানে তুলে ধরা হয়েছে। একজন উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়কে কীভাবে পরিচালনা করতে পারেন এবং কোন পদক্ষেপ তার ব্যবসায়কে আরো দীর্ঘমেয়াদী করবে তার বর্ননা করা হয়েছে এই বইটিতে। কীভাবে অপারেট করবেন, কখন এক্সপান্ড করবেন এবং গ্রোথ কন্টিনিউ করবেন এই তিনটি জিনিসকে লেখক গুরুত্ব দিয়েছেন।
৭. দ্যা সেভেন হেভিট অফ হাইলি এফেক্টিভ পিপল

১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হওয়া “স্টেফেন আর কোভে” দ্বারা দ্যা সেভেন হেভিট অফ হাইলি এফেক্টিভ পিপল উদ্যোক্তাদের জন্য একটি পার্সোনালাইজেশন হিসেবে কাজ করে। এই বইটিতে পৃথিবীর সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যকার ৭টি অভ্যাসের কথা বলা হয়েছে। একজন উদ্যোক্তা কীভাবে নিজেকে প্রাণবন্ত রাখতে পারে এবং কোন কাজ শেষে তার ফলাফল কেমন হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে বলেছেন লেখক বইটিতে। কোন কাজটিকে আপনি সবার আগে প্রাধান্য দিবেন যার কারণে আপনি এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন সেই সম্পর্কেও বর্ননা করা হয়েছে। এছাড়াও একজন উদ্যোক্তাকে কীভাবে কোলাবোরেশন, কমিউনিকেশন ও টিমওয়ার্কের স্কিল ডেভেলপ করা তা শিক্ষা দিয়ে থাকে এই বইটি।
৮. গুড টু গ্রেট
“জেমস সি কলিন” দ্বারা গুড টু গ্রেট বইটি ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়। একটি ইন্ড্রাস্টিতে কিছু কোম্পানী কীভাবে ব্যবসায় করে থাকে অপরদিকে কিছু কোম্পানী কীভাবে ফ্লপ করে, কী ধরনের পদক্ষেপ কোম্পানীতে সফলতা এনে দেয় ও কী ধরণের স্ট্রাটের্জি লংটার্ম সার্ভিস দিবে এখানে তা বলা হয়েছে। বইটিতে প্রায় ২৫টি কোম্পানী হতে প্রাপ্ত ডাটা দিয়ে সাজানো হয়েছে। কীভাবে যোগ্য লিডারশিপ হয়ে উঠা যায়, কাদের বেশি প্রাধান্য দিতে হবে, এবং নিয়ম অনুযায়ী কর্মীদের কীভাবে কাজ করাতে হবে তা বলা হয়েছে।
৯. দ্যা টিপিং পয়েন্ট
২০০০ সালের মার্চ মাসে ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল দ্বারা দ্যা টিপিং পয়েন্ট সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। এই বইটি মূলত সোশ্যালজি, সাইকোলজি ও ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরী। কীভাবে অতীতে ছোট ছোট পদক্ষেপ বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে এই বইটিতে তা তুলে ধরা হয়েছে। তুচ্ছ কোন কিছু কীভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বড় পরিবর্তন আস্তে পারে এই বইটি পরে সেটা জানা যাবে।
১০. থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ
নেপোলিয়ান হিল কর্তৃক থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ বইটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয়। বইটিতে লেখক ৫০০ সফল মানুষের সাক্ষাৎ নেন এবং সেখান থেকে ৬টি জিনিসকে আলাদা করেন যা একজন মানুষকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে আনতে সাহায্য করবে। লেখকের মতে একজন মানুষের গ্রোথ তার চিন্তাশক্তির উপর নির্ভর করে। যত চিন্তা বেশী ঠিক ততোটাই গ্রোথ বেশী। বিশ্বাস, চিন্তাশক্তি ও চেষ্টা দিয়ে উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন।
জ্ঞানচর্চায় বইয়ের বিকল্প নেই। তাই একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে বই আপনার সঙ্গী হতে পারে। তাই বর্ণিত বই দ্বারা নিজেকে আর্দশ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলুন।