একটি দেশের উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অনেক। একজন উদ্যোক্তা ও একজন আদর্শ উদ্যোক্তার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। উদ্যোক্তার এই ক্ষেত্রে “স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে তা রক্ষা করা কঠিন” এই প্রবাদটির মিল রয়েছে। কেননা উদ্যোক্তা হিসেবে শুধু বিজনেস শুরু করলেই হবে না, এর সফলতার জন্য অনেক ধৈর্য্য শ্রম এর পাশাপাশি অনেক ভুল বিষয়ও পরিহার করতে হবে। উদ্যোক্তার ভুল এর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তারা ব্যবসায় পিছিয়ে পড়ে।
উদ্যোক্তার ৭ টি কমন ভুল নিয়ে বিস্তারিতঃ
১। অতিরিক্ত আত্ন-বিশ্বাস
একজন উদ্যোক্তা সবসময় আত্ন-বিশ্বাসী হয়। আত্ন-বিশ্বাসী সব সময় মঙ্গল জনক হলে ও অতিরিক্ত আত্ন-বিশ্বাস সবসময় ক্ষতিকর। অতিরিক্ত আত্ন-বিশ্বাস কখনো কখনো ক্ষতি বা পতনের কারন ও হয়। অতিরিক্ত আত্ন-বিশ্বাসের ফলে তিনি মনে করেন যেকোন কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে তার মধ্যে এর ফলে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি ভাবে না। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এটি উদ্যোক্তার ভুল এর মধ্যে অন্যতম।
২। অনেক কিছু একসাথে শুরু করা
আপনি যতই দক্ষ, পরিশ্রমী ও সৃজনশীল হোন না কেনো চাইলেই আপনি বহুকাজ গুলো একসাথে সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে শেষ করতে পারবেন না। কেননা প্রতিটি মানুষেরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রায়ই দেখা যায় একজন উদ্যোক্তা এক সাথে অনেক কিছু শুরু করে যার ফলে সে কিছুই পরিপূর্ণ শেষ করতে পারে না। এটি উদ্যোক্তার ভুল, যার ফলে পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে হয়।
৩। এক জায়গায় বিনিয়োগ
আদর্শ বিনিয়োগ হচ্ছে পোর্টফোলিও ভাবে বিনিয়োগ করা। যাতে এক যায়গায় ক্ষতি হলেও অন্য বিনিয়োগের লভ্যাংশ দ্বারা পুষিয়ে নেওয়া যায়। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায় এক যায়গায় বিনিয়োগ করে । এক যায়গায় বিনিয়োগ উদ্যোক্তার ভুল। কেননা একজন উদ্যোক্তার শুরু টা কন্টাকীর্ন হয়, প্রথমেই যদি ক্ষতির সম্মুখীন হয় তার ঘুরে দাড়াতে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। তাই উদ্যোক্তার এই এক যায়গায় সব বিনিয়োগ বিনিয়োগ না করে একাধিক যায়গায় বিনিয়োগ করা উচিত।
বিভিন্ন যায়গায় বিনিয়োগের ফলে তার বিজনেসে ঝুঁকি কমে আসে এবং সে একটা সময়ে নিজেই জানতে পারে কোথায় তার বিনিয়োগ বেশি করা উচিত আর কোথায় বিনিয়োগ কম করা উচিত। সে একাধিক যায়গায় বিনিয়োগের ফলে বাস্তবিক ধারণা বৃদ্ধি পায় পক্ষান্তরে এক যায়গায় বিনিয়োগের ফলে তার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং বাস্তবিক জ্ঞান এক যায়গায়ই সীমাবদ্ধ থাকে। তাই উদ্যোক্তাকে বর্তমান বাজারে টিকে থাকতে একাধিক যায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে। এক যায়গায় অনেক বিনিয়োগ করে যা উদ্যোক্তার ভুল।
৪। দক্ষ না হয়ে ঝুঁকি গ্রহন
যেকোন বড় সাফল্যের পেছনে ঝুঁকি রয়েছে। সব বিজনেসে ঝুঁকি বিদ্যমান কোনটাতে কম কোনটাতে বেশি।বিজনেসয়ের সাথে ঝুঁকি ওতপৌত জড়িত। তবে ঝুঁকি নিতে হবে ঠিক ততটুকু যতটুকু রিকভারি করা যায়। একজন উদ্যোক্তা দক্ষ না হয়ে অনেক সময় ঝুঁকি নিয়ে থাকে এর ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি আসে না। এবং ঝুঁকিতে বড় ধরনের আর্থিক সমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হয়। অপ্রাসঙ্গিক ঝুঁকি নিয়ে থাকেন যা উদ্যোক্তার ভুল হিসেবে পরিগন্য। একজন উদ্যোক্তার অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে তবে যেই বিষয়ে ঝুঁকি গ্রহন করবে সেই বিষয় সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে।
৫। মার্কেটিং এর গুরুত্ব অবমূল্যায়ন
মার্কেটিং এ প্রচারই প্রসার। এর যত প্রচার করা হবে তত এর পরিধি বৃদ্ধি পাবে।মার্কেটিং হল কোন পণ্য, বিজনেস ,সার্ভিস ,অথবা ব্র্যান্ডের প্রচার ও প্রসার এর কাজে ব্যবহার করা একটি প্রক্রিয়া। তাই এটি কে অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা উদ্যোক্তা মার্কেটিং কে অবমূল্যায়ন করছে ফলে তার বিজনেসয়ের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আর একটা বিজনেসের যদি পরিধি বৃদ্ধি না পায় তাহলে সে বিজনেস সফলতার মুখ দেখতে পায় না। তাই অবশ্যই একজন উদ্যোক্তাকে মার্কেটিং কে মূল্যায়ন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই ভুল করে থাকেন।
ব্যবসায়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করার একটি অন্যতম অংশ হল কন্টেন্ট মার্কেটিং। কিভাবে স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন অনুসরণ করে খুব সহজভাবে কন্টেন্ট মার্কেটিং শিখবেন তা জেনে নিতে পারেন আমাদের কন্টেন্ট মার্কেটিং এর উপর লিখা ব্লগটি পড়ে।
৬। কর্মী নিয়োগে উদ্যোক্তার ভুল
উদ্যোক্তা অনেক সময় তড়িগড়ি করে অদক্ষ্য লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে। যার প্রভাব সরাসরি তার বিজনেসে পড়ে, কেননা কর্মীগনই বিজনেস কিংবা প্রতিষ্ঠানের চালিকা শক্তি। আপনার সার্ভিস বা সেবার মান কেমন হবে সেটা নির্ভর করে কর্মীগনের উপরই। আপনার পন্যের গুণগত মান কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠানের সেবার মান কেমন হবে সব কিছুই নির্ভর করে আপনার কর্মীদের উপর।
আর এই ক্ষেত্রে দেখা যায় উদ্যোক্তা কমন ভুল করে থাকেন। এই ভূলের প্রভাব সরাসরি বিজনেস প্রতিষ্ঠানে পড়ে। অদক্ষ্য কর্মী দ্বারা পন্য তৈরি করলে তার গুনগত মান ঠিক থাকবে না। বা যদি গুনগত মান ঠিক থাকে তাহলে ও একজন দক্ষ কর্মীর যতটুকু কাজ সম্পাদান করতে পারে একজন অদক্ষ্য কর্মী ততটুকু কাজ সম্পাদান করতে পারে না।
৭। হতাশ হয়ে যাওয়া
বিজনেসে লাভ ক্ষতি বিদ্যমান। এখানে অবিরাম দ্বারা বলতে কিছুই নেই। আজ ক্ষতি হলেও লক্ষ্য ঠিক রেখে দক্ষতার সহিত কাজ করে গেলে আগামীকাল লাভবান হবেই। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন উদ্যোক্তা প্রথমবার লাভবান না হলে হতাশ হয়ে যায়। কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে এতে করে ব্যবসায়ের উন্নতি আসে না।
উদ্যোক্তাকে সবসময় মনে রাখতে হবে সফলতা একদিনে আসে না, এর জন্য দক্ষতা, পরিশ্রমের পাশাপাশি ধৈর্য্যও লাগবে। সফলতার জন্য ধৈর্য্য রেখে বিরামহীন ভাবে কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই সফলতা আসবে। সাময়িক ক্ষতিতে হতাশ হয়ে গেলে বড় সাফল্যের দেখা পাবে না। পরিস্থিতি যাই ঘটুক না কেন একজন উদ্যোক্তার সবরকম ফলাফলের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। অল্পতে হতাশ হয়ে উদ্যোক্তারা ভুল করে থাকেন।
পরিশেষে বলা যায় যে উদ্যোক্তা যেমন অনেক গুনাবলী আছে যা তাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে তেমনি উদ্যোক্তা জীবনে উদ্যোক্তার ভুল ও তাকে পিছিয়ে নিয়ে যায়। তাই একজন উদ্যোক্তাকে আদর্শ উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে অবশ্যই এই ভুল গুলো পরিহার করতে হবে। তাহলে খুব অল্প সময়ে সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।