একজন উদ্যোক্তার মাইন্ডসেট কেমন হওয়া উচিত? এসব ব্যাপারে আমাদের দেশে খুব একটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাদের দেয়া হয় না । আমরা ছোট বেলা থেকেই শিখে আসি বড় হতে হলে, ভালো নাম্বার পেয়ে পাশ করতে হবে ভাল চাকরী করতে হবে। কেউ আমাদের উপদেশ দেয় না যে একজন বড় হয়ে নিজে কিছু করতে হবে। তাই এদের মধ্যে থেকে যারা আউট অফ বক্স চিন্তা করে। তারা শুরুর দিকে জানে না একজন উদ্যোক্তার মাইন্ডসেট কেমন হওয়া উচিত।
যারা চাকরী খোজার চিন্তা বাদ দিয়ে স্বপ্ন দেখে নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরী করার তারাই হলেন উদ্যোক্তা। একজন উদ্যোক্তার সবার আগে নিজের স্ট্রংমাইন্ডসেট তৈরী করা অনেক জরুরী কেননা মনোবল তৈরী না করে কখোনই একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব না।
কেন একজন উদ্যোক্তার মাইন্ডসেট তৈরী করা জরুরী ?
একজন উদ্যোক্তার জীবনে অনেক উথাল পাতাল ভাঙা গড়া থাকে। এই কন্টক পথ পারি দিতে পারলেই সে হয়ে উঠে সফল উদ্যোক্তা আর যারা হার মেনে যায় তারা ঝরে পরে যায়।
কিন্তু এই কঠিন পথ পারি কিভাবে দিবেন একজন উদ্যোক্তা? কিভাবে একজন উদ্যোক্তা কিভাবে তৈরী করবে তার মাইন্ডসেট?
তার মনোবল ঠিক কেমন হওয়া উচিত? জীবনের নানান পরিস্থিতে কিভাবে চিন্তা করলে তা মোকাবেলা করা যায়? একজন উদ্যোক্তাকে কিভাবে কোন দৃষ্টিতে দেখতে হয় সব কিছু?
এ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
একজন উদ্যোক্তাকে যে ধরনের মাইন্ডসেট নিজের মধ্যে তৈরী করতে হবে–
১। কাস্টমারকে বুঝতে চাওয়ার ইচ্ছা
সবার আগে আপনাকে আপনার অডিয়েন্স এর প্রয়োজনের ব্যপারে চিন্তা করতে হবে। আপনি আপনার ইন্টারেস্টের জায়গা থেকে ব্যবসা শুরু করলেন ঠিক আছে কিন্তু আপনাকে এটাও চিন্তা করতে হবে যে আপনার অডিয়েন্স এর নিড গুলো কি। আপনি কেবল নিজের ইন্টারেস্টের ব্যাপারে চিন্তা করলেই হবে না আপনাকে কাস্টমারের চাহিদা সম্পর্কেও অ্যানালাইসিস করতে হবে। একজন উদ্যোক্তার মাইন্ডসেট সবার আগে এভাবেই তৈরী করা উচিত।
২। আত্মনীর্ভরশীল
একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই সেলফ ডিপেন্ডেন্ট হতে হবে। নিজের বিজিনেস এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সে একাধিক লোক নিয়োগ করলেও কারও প্রতি নির্ভরশীল হওয়া যাবে না।
একজন উদ্যোক্তার মাইন্ডসেটে একধরনের গাটস নিজের মধ্যে তৈরী করতে হবে যেন যে কোন পরিস্থিতি সে একাই ডিফেন্স করতে পারে ।
৩। ধৈর্য্যশীল
উদ্যোক্তাদের জন্যে বিশেষ করে স্টার্টআপ এর ক্ষেত্রে এই ধৈর্য্যই হল মূল শক্তি। আপনি আজকে ইনভেস্ট করে কালকেই প্রফিট পাবেন না। আপনার লক্ষ্য যদি এমন হয় যে আপনি খুব দ্রুত শর্টকাটে অনেক টাকা ইনকাম করে ফেলবেন তাহলে দিন শেষে আপনি শুধু হতাশই হবেন। সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হবে।
৪। দায়িত্বশীল
বিজনেস এর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র ব্যাপার গুলোর ব্যাপারে নিজেকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আপনার বিজনেসে এ যদি অন্য কেউ সম্পৃক্ত থাকে তবুও সব ব্যপারে আপনার ইনভলমেন্ট টা খুব প্রয়োজনীয়। আপনি চাইলে “নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি কিভাবে শুরু করবেন” এই ব্লগটি পড়ে আসতে পারেন।
অন্যদিকে একজন সফল উদ্যোক্তা কোন সমস্যার জন্য অন্যকে দোষারোপ করে না সুতরাং আপনি নিজেকে দায়বদ্ধ এবং প্রবলেম সল্ভার মনে করুন। একজন উদ্যোক্তার মাইন্ড সব সময় এভাবে চিন্তা করবে যেন সে নিজেই কোম্পানীর CEO।
৫।গোল – অরিয়েন্টেড
একজন উদ্যোক্তার গোল-অরিয়েন্টেড হওয়া অত্যন্ত জরুরী বিজনেসের শুরুতেই আপনার জন্য লক্ষ্য স্থির করা বাধ্যতামূলক। আপনি আপনার গোল দ্রুত পৌছাতে পারবেন যদি আপনি গোল গুলোকে ছোট ছোট করে ভাগ করে নেন। অর্থাৎ, ধাপে ধাপে গোল সেট করে এবং এক্সিকিউট করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
৬। ডিটারমাইন্ড
যে কোন গোল সেট করার পর সেটাতে সাকসেস না পেলে প্রথমেই হতাশ হওয়া যাবে না। ধৈর্য্য ধরে সেটাতে লেগে থাকতে হবে। বিজনেস এর জন্যে আপনি যখন কোন নতুন সিদ্ধান্ত নেন সাথে সাথে আপনি তার রেজলাট পাবেন না কিন্তু আপনি যদি সঠিক পথ ধরে আগান এবং লেগে থাকেন আপনি অবশ্যই ফল পাবেন এবং সেজন্যে আপনাকে ডিটারমাইন্ডেড থাকতে হবে। বিজনেস এর সমস্যা গুলোও প্রোপার ডিটারমেশন দিয়ে সল্ভ করতে হবে।
৭। কাস্টমারের ফিড ব্যাক নেয়ার মনোবল
বিজনেস এর ক্ষেত্রে কাস্টমারের পজিটিভ এবং নেগেটিভ দুটি ফিড ব্যাকই মাথা পেতে গ্রহন করা জরুরী। আপনি কাস্টমারের নেগেটিভ ফিডব্যাক গুলোকে ইগনোর করে গেলে আপনি সেলফ গ্রোথ করতে পারবেন না। কাস্টমারের নেগেটিভ ফিডব্যাক গুলোকেই কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার সেলফ গ্রোথ করতে পারবেন ।
৮। কম্ফোর্টজোন থেকে বের হয়ে আসা
আমাদের প্রত্যেকেরই কাজের ক্ষেত্রে একটা কম্ফোর্টজোন এর জায়গা থাকে। আমরা কেউ-ই খুব একটা চাই না সেই কম্ফোর্টজোন থেকে বের হয়ে এসে কাজ করতে। কিন্তু এখানেই একজন চাকরিজীবি এবং একজন উদ্যোক্তার মধ্যে পার্থক্য।
আপনি একজন উদ্যোক্তা হন তখন যখন আপনি সিদ্ধান্ত নেন যে আপনি নিজেই নিজের বস হবেন, তখন আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে প্রয়োজনে আপনাকে আপনার কম্ফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে এসে কাজ করতে হবে। যখন আপনি আপনার কম্ফোর্টজোন থেকে বের হয়ে আসবেন তখনই আপনি যাচাই করতে পারবেন যে আপনার যোগ্যতা ঠিক কতটুকু।
৯। প্রবলেম সলিভিং স্কিল
বিজনেজ এ সবসময়ই সমস্যা আসবে এর কোন শেষ নেই। সুতরাং আপনার অবশ্যই প্রবলেম সল্ভিং দক্ষতা থাকা লাগবে । অর্থাৎ আপনার সামনে যেকোন সময় যেকোন সমস্যা আসবে এবং আপনাকে সব সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে এইরকম মনোবল নিয়েই বিজনেস এর জন্য মেইন্ডসেট তৈরী করা উচিত।
১০। একশন অরিয়েন্টেড
কেবল প্ল্যান করে করে সময় নষ্ট করলে হবে না। একজন উদ্যোক্তার মুখে কেবল বড় বড় বুলি মানায় না। একজন উদ্যোক্তা কতটা সফল তা নির্ভর করে তার একশনে। সুতরাং আপনি আপনার প্লান নিয়ে কতটা কাজ করছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনি কতটা সফল হবেন। একজন উদ্যোক্তার মাইন্ডসেট সব সময় হবে একশন অরিয়েন্টেড।
একজন মানুষ যখন উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। তখন তাকে পারিবারিক এবং সামাজিক সহ নানা ধরনের বাধার সম্মুক্ষীন হতে হয়। সুতরাং মানিসিক ভাবে শক্ত না হয়ে একজন উদ্যোক্তা হতে চাওয়া অসম্ভব। আপনি যদি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান আপনাকে অবশ্যই উল্ল্যেখিত বিষয় গুলোর ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে এবং সেভাবেই নিজের উদ্যোক্তা হবার মাইন্ডসেটটি তৈরী করতে হবে।