সহজ এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদির সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ নারী স্টার্টআপ ফাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইট বিজনেস ফাইন্যান্সিং ইউকে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নারী ফাউন্ডারদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।
সেই তালিকায় অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল, গ্র্যাব, উইল্যাব এর মতো বিখ্যাত এশিয়ান কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারাও রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ নারী ফাউন্ডার হিসেবে এককভাবে এই স্বীকৃতি পেয়েছেন সহজ এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদির।
মালিহা এম কাদির-এর অর্জন
বিজনেস ফিন্যান্সিং সেইসব নারী প্রতিষ্ঠাতাদের নির্বাচিত করেছে যারা একটি নির্দিষ্ট দেশ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে একটি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বা সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং তাদের ক্রাঞ্চবেসে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ক্রাঞ্চবেস হল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা প্রফেশনালদের জন্য উদ্ভাবনী কোম্পানি খুঁজে বের করে। প্রতিটি দেশ থেকে এমন নারীদের নির্বাচিত করা হয়েছে যারা তাদের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বাধিক ফান্ডিং পেয়েছে।
সহজ বিভিন্ন ইউরোপীয় ও এশিয়ান ইনভেস্টরদের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের সবচেয়ে বড় রাউন্ডের ফান্ডিং সংগ্রহ করেছে। এর ওপর ভিক্তি করে মালিহা কাদির শীর্ষস্থানীয় মহিলা প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তালিকায় স্থান করে নিয়েছন। তালিকায় ১০৭ টি দেশের ১০৭ জন মহিলা প্রতিষ্ঠাতা এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা রয়েছেন। চীনের লুসি পেং (Lucy Peng) অ্যান্ট ফিনান্সিয়ালের জন্য ২২ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের মাধ্যমে তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন।
বাংলাদেশের অনস্ট্রাকচার্ড ভ্রমণ এবং টিকিট ইন্ডাস্ট্রিকে ডিজিটালাইজ করার জন্য মালিহা কাদির ২০১৪ সালে ৫০ জন কর্মচারী নিয়ে সহজ প্রতিষ্ঠা করেন। খাদ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে রাইড-শেয়ারিং, টিকিট, স্বাস্থ্য এবং লজিস্টিক পরিসেবা সহ বিস্তৃত পরিসেবা প্রদান করে এই প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে সহজ ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ এবং সহজে কর্মরত রয়েছে ৩৫০ এর বেশি মানুষ। সহজ এখন বাংলাদেশে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান স্টার্ট-আপ যার মধ্যে সর্বাধিক বেশি পরিসেবা রয়েছে। ২০১৮ সালে, সহজ রাইড-হাইলিং মার্কেটে প্রবেশ করে এবং একই বছরে কোম্পানি ঘোষণা করে যে, এটি সিঙ্গাপুরের গোল্ডেন গেট ভেঞ্চার এবং অন্যান্য সম্প্রসারণের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
করোনা মহামারী চলাকালীন, গ্রোসারি, ওষুধ এবং ই-স্বাস্থ্য (ভিডিও-ভিত্তিক ডাক্তারের পরামর্শ) পরিসেবা চালুর মাধ্যমে সহজের বিকাশ আরো বেড়ে গেছে। সহজ কোভিড -১৯ নামের কন্টাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ তৈরিতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করেছে। মালিহা কাদির তার প্রতিষ্ঠানের নাম “সহজ” রাখেন মানুষের জীবন আরো সহজ করার লক্ষ্যে। মালিহা কাদির বাংলাদেশে বড় হলেও তিনি ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কলেজ থেকে অর্থনীতি এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতক শেষে মালিহা কাদির মর্গান স্ট্যানলির নিউইয়র্ক এবং সান ফ্রান্সিসকোর এনালিস্ট প্রোগ্রামে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি হার্ভার্ডে পাড়ি জমান তার এমবিএ কমপ্লিট করার জন্য।
এমবিএ করার মর্ধবর্তী সময় মালিহা কাদির এক বছর বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন এবং সেই সময় তিনি দেশের প্রথম ক্লাসিফাইড লঞ্চ করেন। এমবিএ শেষ করার পর তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সিঙ্গাপুরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কাজ করেছেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহযোগী পরিচালক ছিলেন মালিহা কাদির। সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন বেশিরভাগ সময় তিনি নোকিয়া এবং একটি ই-কমার্স কোম্পানিতে কাজ করেন যার নাম ভিস্টাপ্রিন্ট (Vistaprint)। মালিহা কাদির সিঙ্গাপুরে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কাটান এবং সেই সময় তিনি নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর চিন্তা করেন।
মালিহা এম কাদির ইউকে বিজনেস ইনসাইডার ম্যাগাজিন অনুযায়ী শীর্ষ ১০০ গ্লোবাল ফিমেল ফাউন্ডার তালিকায় রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সেরা মহিলা আইসিটি উদ্যোক্তা পুরস্কার, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক ইয়াং গ্লোবাল লিডার হিসেবে স্বীকৃতি, ডেইলি স্টার বেস্ট আইসিটি স্টার্টআপ অফ দ্য ইয়ার এবং অনন্যা ম্যাগাজিনের সেরা দশ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন।