বাংলাদেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকিং এর প্রথম মহিলা সিইও হলেন হুমায়রা আজম। তিনি বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রথম মহিলা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। অতীতে কিছু নারী ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও হুমায়রা বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রথম পূর্ণাঙ্গ নারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সরকার এর আগে মাহতাব জাবিনকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করেছিল, তবে তিনি একটি রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংকের প্রথম মহিলা সিইও হিসেবে ছিলেন।
ব্যক্তিগত পরিচিতি
হুমায়রা আজম, একজন শিক্ষানবিশ এবং অ্যান্থোফিল, তিনি ঢাকার একটি সম্মানিত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৪ সালের ৩ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
হুমায়রা আজম এর শিক্ষাজীবন
হুমায়ারা আজম ভিকারুননিসা নূন স্কুল শেষে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতোক্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
শিক্ষাজীবন
সামাজিক বিজ্ঞানে মাস্টার্স (International Relations) শেষ করার পর হুমাইরা আজম ১৯৯০ সালে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে (ANZ Grindlays Bank) ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৩ সালের দিকে তিনি এএনজেড ব্যাংকে স্থানীয় কর্পোরেট ব্যবসাকে আরো প্রসারিত করেন।
কর্মজীবন
১৯৯৬ সালে, হুমায়রা আজম এইচএসবিসি বাংলাদেশে যোগদান করেন, যেখানে তিনি ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে, তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে যোগদান করেন, যেখানে তিনি গ্রুপ স্পেশাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (GSAM) বিভাগের পরিচালক এবং ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট বিভাগের পরিচালক ও প্রধান হিসেবে সাত বছর দায়িত্ব পালন করেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কান্ট্রি বাজেটের ঘাটতি সফলভাবে রিকভার করার ক্ষেত্রে হুমায়রা অবদান ছিল অতুলনীয়।হুমায়রা আজম এসসিবি বাংলাদেশের (SCB Bangladesh) কান্ট্রি ম্যানেজমেন্ট কমিটির (MANCO) প্রথম মহিলা সদস্য। তিনি এসসিবিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান পুনর্গঠন ও বিস্তৃত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনি এমডি এবং সিইও হিসেবে আইপিডিসিতে (IPDC Finance Ltd.) যোগদান করেন। আইপিডিসিকে পরিমাণ এবং গুণগত দিক থেকে ব্যবসা এবং কর্মক্ষম বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে সাহায্য করেন হুমায়রা। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যাংক এশিয়ায় উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিফ রিস্ক অফিসার হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি ২০১৮ সালে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ট্রাস্ট ব্যাংকে যোগদান করেন।
দক্ষতা উন্নয়ন
হুমায়রা আজম দেশে এবং বিদেশে প্রচুর সংখ্যক প্রফেশনাল ট্রেনিং, ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, ওয়ার্কশপ এবং সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
হুমায়রা-আজম এর অর্জন-সাফল্য
কেমব্রিজ আইএফএ এর ওমানি ২০২০ (WOMANi 2020) বার্ষিক প্রতিবেদনে তিনি ইসলামী ব্যবসা ও অর্থায়নে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৩০০ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (JCI) বাংলাদেশ, মিসেস আজমকে তার আর্থিক খাতে দক্ষতা এবং অকাট্য সাফল্যের দুর্দান্ত প্রদর্শনের জন্য ‘ওম্যান অব ইন্সপায়ারেশন অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ প্রদান করেছে। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ তাকে “শীর্ষ মহিলা ব্যাংকার্স পুরস্কার” দিয়ে সম্মানিত করেছে। ব্যাংকিংয়ে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি শীর্ষস্থানীয় ক্যারিয়ার অর্জনকারী সাব ক্যাটাগরির অধীনে “BOLD (বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন ফর লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) উইমেন অব ইন্সপায়ারেশন অ্যাওয়ার্ড 2017” পেয়েছেন। এর আগে, এইচএসবিসি (HSBC), বাংলাদেশ তার অসামান্য কৃতিত্বের জন্য তাকে “হেক্সাগন সেলস অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করে।
প্রতিবন্ধকতা
তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেন , তার এই অবস্থানে আসার পেছনে অনেক প্রতিবন্ধতাও ছিলো। তবে তিনি যান নি । তিনি বলেন যখন হরতাল হতো, গুলশান থেকে হেঁটে হাজি ম্যানশন পর্যন্ত চলে গেছি। ব্যাংক এশিয়ায় থাকাকালে হরতালের সময় অনেকেই আসত না। আমি চলে আসতাম। ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক ছাড় দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন কাজের প্রতি সব সময় ডেডিকেটেড থাকার ফলে বাচ্চাদের তেমন সময় দিতে পারিনি। চাকুরী আর ফাঁকি এক সাথে সম্ভব না। ঢাকার বাহিরে বহুবার যেতে হয়েছে। সব সময় দায়িত্ব আর কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছি। এনজেডে থাকতে এমনও হয়েছে সাত-আট দিন আমি অফিসেই আছি। বাসা থেকে খাবার ও কাপড় গেছে। তবে এর মধ্যেও পরিবারকেও সময় দিয়েছি। এখনো বাসার কাজও করি নিয়মিত।
সবশেষে বলা যায় ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সফলতা পেয়েছেন। বহু প্রতিকুল পরিবেশে ও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।
গত ৩১ বছরে তিনি অনেক দলকে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং চমৎকার ফলাফল প্রদান করেছেন।
পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।