বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম – হাংরিনাকি

Hungrynaki
Share This Post

বর্তমানে অনলাইনে পাওয়া যায় না এমন পণ্য খুব কমই আছে। সেই সাথে তাল মিলিয়ে ফুড ডেলিভারি প্লাটফর্মগুলো তাদের সার্ভিসের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী জায়গা করে নিয়েছে। হাংরিনাকি ঠিক তেমনি একটি অতি পরিচিত অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছে।

১৯৯৪ সালে পিজা হাট প্রথম অনলাইন ফুড অর্ডার চালু করে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য অনলাইন ফুড বিজনেস, বিশেষত ঢাকা এবং দেশের আরও কয়েকটি শহরে অনেক বেশি পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সূত্রে স্টার্ট-আপ হাংরিনাকি ২০১৩ সালে প্রথমবারের মত দেশে অনলাইন ফুড ডেলিভারি ধারণাটি চালু করেছিল এবং পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি সংস্থা এই ব্যবসায় যুক্ত হয় এবং যার মাধ্যমে ঘরে বসে পছন্দের খাবার খুব সহজেই যেকোন সময় অর্ডার করে ডেলিভারি করা সম্ভব হয়।

ইন্টারনেট এর কল্যানে ঘরে বসেই পছন্দের ফুড অর্ডার করা খাবার-প্রেমীদের জন্য খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন ফুডলাভারদের কষ্ট করে রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে লম্বা লাইন ধরার প্রয়োজন হয় না। নিজের ফোন বা ল্যাপটপ এর মাধ্যমে ফুড অর্ডার করা সম্ভব হয় যেকোন সময়। গ্রাহক এবং রেস্টুরেন্ট যারা অনলাইন অর্ডারে অংশ নেন তাদের উভয়ের জন্যই সুবিধা রয়েছে। অনেক সময় রেস্টুরেন্ট এর লোকেশন নিয়ে থাকে প্রব্লেম যেখানে অনেক গ্রাহক যেতে পছন্দ করেন না। এদিকে অনলাইন এর মাধ্যমে ফুড ডেলিভারি করার কারণে রেস্টুরেন্টগুলো করতে পারছে নিজেদের ব্র্যান্ডিং, আবার ঘরে বসেই মুহূর্তের মধ্যে খাবার ডেলিভারি নিতে পারছে গ্রাহকরা।

বাংলাদেশের যতগুলো স্ট্যান্ডার্ড ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে তার মধ্যে হাংরিনাকি অন্যতম। ২০১৩ সালে প্রতিষ্টিত এই ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু করে দেশীয় ব্র্যান্ড হিসাবে, যাতে করে ব্র্যান্ড এর নামের মধ্যে একটি দেশীয় অনুভুতি নিয়ে আসা যায় তার জন্যে নামকরণ করা হয়েছে হাংরিনাকি। 

প্রাথমিক অবস্থায় এই অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য হচ্ছেন তৌসিফ আহমেদ, আহমদ এডি ও সাজিদ রহমান। তাদের সবাই চাকরিতে যুক্ত থাকলেও বিভিন্ন বিজনেস আইডিয়া জেনারেট করার জন্য চিন্তা করতেন। এভাবে আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে কাটিয়ে দেন প্রায় ৩ মাসের মত সময় কিন্তু তখনো ফুড ডেলিভারি সার্ভিস এর কথা তাদের মাথায় আসেনি। মজার বিষয় হল এই দীর্ঘ আলোচনার সময় তারা সব সময় বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করতেন। কখনো গাড়ি পাঠিয়ে ড্রাইভার দিয়ে খাবার আনতেন বা পাশের দোকান থেকেই কিছু একটা খেয়ে নিতেন কারণ সেই সময় বাংলাদেশে পিজা হাট এবং অল্প কিছু রেস্টুরেন্ট ছাড়া কোন রেস্টুরেন্ট ফুড ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেনি।

সেই সময় তারা উপলব্ধি করেন তাদের যদি প্রয়োজন এর সময় খাবার নিয়ে আসতে সমস্যা হয় তবে নিশ্চই আরও মানুষ যারা একই ধরণের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সেই মুহূর্তেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশে, বিশেষত ঢাকায় খাদ্য সরবরাহের মত কিছু করার চেষ্টা করবেন। সেই চিন্তা থেকেই ২০১৩ সালের অক্টোবর এর ১ তারিখ তারা তাদের ওয়েবসাইট লঞ্চ করেন। ৬ জন টীম মেম্বার, অফিসের একটি রুম ভাড়া নিয়ে পথ চলা শুরু হয়। ছিল মাত্র ৩০ টি রেস্টুরেন্ট এর সাথে পার্টনারশীপ, এর মাধ্যমে তারা তাদের অপারেশন শুরু করেন এবং দুই জনের একটি ডেলিভারি টিম ছিল তাদের সাথে।

হাংরিনাকি প্রথম মাসে ২০০ টি অর্ডার সম্পন্ন করেছিল। এই অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মটির কো-ফাউন্ডার এবং প্রধান নির্বাহী হলেন আহমেদ এডি।

অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হাংরিনাকি এর কো-ফাউন্ডার

যাত্রা খুব সীমিত পরিসরে হলেও বর্তমানে এই অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মটির বিস্তার বেড়ে গেছে অনেক দূর। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এই ৫ টি শহরে অপারেটিং করছে। বার্গার থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, সামুদ্রিক খাবারসহ প্রায় ১২০,০০০ এরও বেশি খাবার আইটেমের বিশাল মেনু রয়েছে তাদের অ্যাপ-এ। গ্রাহকদের জন্য রয়েছে সব সময় আকর্ষণীয় প্রমোশনাল কোড এবং ডিসকাউন্ট। সম্প্রতি নতুন ইউআই/ইউএক্স এবং আরো কিছু আকর্ষণীয় ফিচার যোগ করা হয়েছে হাংরিনাকি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে যা এই অ্যাপটির ব্যবহার আরও বেশি সাচ্ছন্দময় করে তুলেছে।

যখন কোনো অর্ডার অনলাইনে প্লেস করা হয় তখন একটি কনফার্মেশন মেসেজ এর মাধ্যমে গ্রাহক এর অর্ডারটি হাংরিনাকি অ্যাপ এর মাধ্যমে কনফার্ম করা হয়। অর্ডার কন্ফার্ম করার ফুডটি রিসিভ করে ডেলিভারি ম্যান সেই অর্ডারটি গ্রাহক এর বাসায় পৌঁছে দেয়। কাস্টমার খাবার পাওয়ার পর ডেলিভারি ম্যানকে পে করতে পারেন বা অনলাইনে বিকাশ বা কার্ড এর মাদ্ধমেও অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার করতে পারেন। 

যদি কোন কারণে অর্ডার বাতিল হয়ে যায় তাহলে অগ্রিম টাকা কাস্টমারদের কিছু নির্দিষ্ট সময় পরেই ফিরিয়ে দেয়া হয়। একজন কাস্টমার যেকোন সমস্যার জন্য কাস্টমার সার্ভিস টিম এর সাথে কমিউনিকেট করতে পারেন। শুরুতে, একটি ভিন্ন ডেলিভারি টিম সেট আপ করা হয়েছিল তাদের ফুড ডেলিভারি করার জন্যে এবং হাংরিনাকি তাদের সাথে একটি থার্ড পার্টি অংশীদার হিসাবে কাজ করছিল। কিন্তু বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটির রয়েছে নিজস্ব ডেলিভারি সার্ভিস।

গ্রাহকদের কাছ থেকে ডেলিভারি চার্জ যা শুরুতে নির্ধারন করা হয়েছিল ঢাকায় ৭৫ টাকা। তবে সেটি এখন কমিয়ে ১৯ টাকা করা হয়েছে। তাদের মূল আর্নিং পয়েন্ট হচ্ছে রেস্টুরেন্ট এর কমিশন। রেস্টুরেন্ট তাদের খাবার এর দামের ওপর ভিত্তি করে কমিশন দেয়। এটি সাধারণত খাবারের ধরণের উপর নির্ভর করে ১০-১৫% এর মধ্যে হয়ে থাকে।

২০২১ সালের মার্চ মাসে আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স সাইট দারাজ, হাংরিনাকি কে কিনে নেয়। রাজধানী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তে আয়োজিত একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই খবরটি সবার সামনে উপস্থাপন করা হয়। আলিবাবা এই স্টার্টআপটিকে ১.০ মিলিয়ন ডলারেরও কম দামে নিজেদের করে নিয়েছে। যদিও এই প্ল্যাটফর্মটি সব থেকে বড় বাংলাদেশী মালিকানাধীন এবং পরিচালিত অনলাইন ফুড ডেলিভারি সার্ভিস দিয়ে থাকে, তবুও শুরুতে বেশ ধাক্কা খেয়েছিল সফলতা অর্জন করতে কারণ এর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জার্মান ভিত্তিক গ্লোবাল ফুড ডেলিভারি সার্ভিস ফুডপান্ডা, যারা বিশ্বব্যাপী ২৬ টি দেশে তাদের সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী পাঠাও, সহজ, ইফুড এর মত প্রতিষ্ঠানের সাথে তাল মিলিয়ে সার্ভিস প্রোভাইড করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।

অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হাংরিনাকি এর ইভেন্ট

এর মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের সাথে দু’বছর লড়াইয়ের পরে ২০১৯ সালে হাংরিনাকির প্রধান অপারেটিং অফিসার তৌসিফ আহমেদ এর মৃত্যুর পর অনলাইন এই প্ল্যাটফর্মটি বেশ হিমশিম খেয়ে যায়। প্রধান নির্বাহী আহমদ এডি এই কঠিন সময়েও তাদের স্টার্টআপটিকে বিল্ডাপ করার চেষ্টা করছিলেন বেশ। এরপর দারাজ এর শতভাগ একোয়ার করে নিয়েছে। তবে, সেখানে কর্মরত সমস্ত কর্মীরা যথারীতি কাজ করবে এবং দারাজের মালিকানাধীন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এটি একটি পৃথক ব্র্যান্ড হিসাবে কাজ করবে।

দারাজ একোয়ার করার বিষয়টিকে পজিটিভ উল্লেখ করে প্ল্যাটফর্মটির সিইও আহমদ এডি বলেন, তাদের জন্য এটি গর্বের বিষয় এবং প্ল্যাটফর্মটিকে একটি শক্তিশালী স্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা দারাজের সাথে যৌথভাবে কাজ করে যাবেন। দারাজ এর অধীনে প্ল্যাটফর্মটি নিজেদের কাস্টমার সার্ভিস, প্রোডাক্ট এর মান, ডেলিভারি টাইমসহ সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারা আপডেট করেছে।

বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্ম এ তাদের ৫০০,০০০ নিয়মিত গ্রাহক রয়েছেন এবং ৫ টি শহরের প্রায় ৪০০০ রেস্টুরেন্ট থেকে তারা সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অধীনে কর্মরত ডেলিভারি ম্যান এর সংখ্যা ২০০০ এর বেশি। লিংকডইন অনুযায়ী তাদের এমপ্লয়ী সংখ্যা এখন ৫০ জনেরও বেশি। ঢাকার মহাখালি ডিওএইচএস এ তারা তাদের কর্পোরেট অফিস পরিচালনা করছেন।

২০২১ সালে দারাজ হাংরিনাকিকে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসার পর প্ল্যাটফর্মটির ফান্ডিং এ আমূল পরিবর্তন আসে। সরাসরি ফান্ড নিয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ না থাকলেও দারাজ এর মাধ্যমে এশিয়ান অনেক বড় কোম্পানি বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মটির ইনভেস্টর। ২০১৫ সালে ডেইলি স্টার আয়োজিত ডেইলি স্টার আইসিটি অ্যাওয়ার্ড এ হাংরিনাকি আইসিটি স্টার্টআপ অফ দ্যা ইয়ার যার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এর প্রধান নির্বাহী আহমদ এডি জানান দারাজের সহায়তায় দেশের সব প্রান্তে হাংরিনাকিকে পৌঁছে দেওয়াই তাদের ভবিষ্যৎ এর মূল লক্ষ্যকেন্দ্র।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? - ৭টি টিপস
Marketing

মাদার্স-ডে সেল টার্গেট কিভাবে অ্যাচিভ করবেন? – ৭টি টিপস

মা’কে ভালবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই কি মাকে ভালবাসি বলা হয়? কিংবা অতটা প্যাম্পার করা হয় যতটা সে ডিজার্ব করে?  আসলে,

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং- এর গাইডলাইন
Marketing

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং গাইডলাইন

ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং, টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানোর এক অন্যতম পাওয়ারফুল টুলস। ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে মার্কেটিং যত সহজ হয়েছে, কম্পিটিশন তত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিউজ