আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং হলো দারুণ দুটো সেলস স্ট্র্যাটেজি বিজনেসের সেল বৃদ্ধি করার জন্য। কারণ এক্সিস্টিং কাস্টমারদের কাছে খুব সহজেই পুনরায় প্রোডাক্টস বা সার্ভিস সেল করা যায়, যেখানে নতুন কাস্টমারদের কাছে সেল করা কিছুটা ডিফিকাল্ট। তারপরও অনেক সেলস পার্সন এই অপারচিউনিটির সঠিক ব্যবহার করেনা, কারণ এই ব্যাপারে তাদের নলেজ এবং স্কিল খুবই কম।
আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং এর জন্য সুপার সেলস স্ট্র্যাটেজি শেয়ার করার আগে চলুন আগে জেনে নেই, আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং বিষয়টি কী।
আপ-সেলিং
আপ-সেলিং হলো একটা সেলস টেকনিক যেখানে একজন সেলস পার্সন এক্সিস্টিং কাস্টমার কে ইম্প্রেস করে আরো বেশি অথবা এক্সপেন্সিভ প্রোডাক্ট কেনার জন্য যাতে করে বিজনেসের প্রফিট বাড়ে। শুধু মাত্র সেসব সেলস পার্সন-ই এই ব্যাপারে সাক্সেস হয় যাদের গ্রেট সেলস পার্সনালিটি আছে এবং আপ-সেলিং সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে।
আপ-সেলিং এর মাধ্যমে আপনার ইনভেস্টমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে বেশ ভালো প্রফিট করতে পারবেন। কেননা, অলরেডি আপনি যাদের কাছে প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সেল করেছেন তাদের কে ইম্প্রেস করা আপনার জন্য অনেক সহজ হবে, এবং আগেই এখানে একটা ট্রাস্টেবল রিলেশনশিপ ক্রিয়েট করা আছে, যার কারণে আপনি যেটাই রেকমেন্ড করবেন কাস্টমার সহজেই আপনার রেকমেন্ড মেনে নিবে। আপ-সেলিং এর প্রসেসটাই এমন যেখানে, কাস্টমার কে অনেক ভ্যালুয়েবল ফিল করানো হয়। যখন আপনি কারেক্টলি প্রসেসটা মেইনটেইন করবেন, তখন কাস্টমার যেমন স্যাটিসফাই হবে, ঠিক তেমনি আপনার সেলস এর প্রফিট ও বাড়বে।
ক্রস-সেলিং
ক্রস-সেলিং অনেকটা আপ-সেলিং এর মতোই, তবে একটু ভিন্ন। যেমন ক্রস-সেলিং এর সময় যখন কোনো কাস্টমার কোনো প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস কিনতে আসে তখন ওই সার্ভিসের সাথে কিছু এডিশনাল সার্ভিস অফার করা হয় কাস্টমার কে। কাস্টমার কে এটা বুঝানো হয় যে, কাস্টমার যে প্রোডাক্ট/সার্ভিস টা নিচ্ছে তার সাথে এডিশনাল আরেকটি প্রোডাক্ট নিলে সে আরো বেটার সার্ভিস পাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো রেস্টুরেন্টে কেউ যদি চিকেন ফ্রাই, ফ্রাইড রাইস অর্ডার করে, তাহলে ওয়েটার এডিশনাল সার্ভিস হিসেবে যেকোনো কোল্ড ড্রিংকস এবং কফি অফার করে। এইভাবে যেমন কাস্টমার স্যাটিসফাই হচ্ছে, ব্র্যান্ড মালিকের সেল ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং কিভাবে কাজ করে?
যদিও আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং দুইটা আলাদা, তবে দুইটার জন্য সেলস স্ট্র্যাটেজি এবং প্রসেস একই। দুইটা পদ্ধতিতেই কাস্টমারদের এডিশনাল সার্ভিস কেনার জন্য ইম্প্রেস করা হয়। নিচে কিছু সেলস স্ট্র্যাটেজি শেয়ার করছি যেগুলোর মাধ্যমে সাক্সেসফুলি আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং করতে পারবেন।
ফ্রি শিপিং অফার করুন
অনেক কাস্টমার এমন কোম্পানি থেকে প্রোডাক্ট, সার্ভিস কিনতে পছন্দ করে যেখানে তারা ফ্রি শিপিং অফার পায়। অনলাইন বিক্রেতারা প্রোডাক্টসের টোটাল প্রাইসের মধ্যেই শিপিং কস্ট ইনক্লুড করে দেয় এবং কাস্টমারদের এটা বুঝায় যে, শিপিং একদম ফ্রি। আপনি এই প্রসেস ফলো করতে পারেন অথবা মিনিমাম পার্চেস অফার সেট করতে পারেন, যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণ কেনাকাটায় শিপিং চার্জ থাকছেনা। তাছাড়াও বিজনেস পেইজে যারা বেশি মেম্বার্স এড করবে, শেয়ার করবে তাদের জন্য ফ্রি শিপিং অফার দিতে পারেন। এভাবে বিজনেসে কাস্টমার এবং সেল দুটোই বাড়বে।
ফলো-আপ ইমেইল সেন্ড
যেকোনো কাস্টমার একটা প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস কেনার পর ব্র্যান্ডের সাথে কানেক্টেড থাকতে চায়, এবং কোনো সমস্যা হলে সার্ভিসও পেতে চায়। ফলো-আপ ইমেইল হলো গ্রেট একটা ওয়ে কাস্টমারদের সাথে কানেক্ট থাকার। তাদের কে থ্যাঙ্কিউ ইমেইল সেন্ড করুন প্রোডাক্ট কেনার জন্য, প্রোডাক্টসের ফিডব্যাক চান। এবং নতুন নতুন প্রোডাক্ট এর আপডেট, অফার, ডিসকাউন্ট জানিয়ে তাদের কে ইমেইল করুন।
লিমিট রেকমেন্ডেশন
আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং এর সময় রেকমেন্ডেশন সবসময় লিমিটেড রাখনু। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সেলস স্ট্র্যাটেজি। কারণ যখন আপনি রেকমেন্ডেশন এ বেশি প্রোডাক্ট অফার করবেন এটা শুধুই কনফিউশন বাড়াবে। এজন্য, কাস্টমারের প্রয়োজন এবং প্রব্লেম বুঝার ট্রাই করুন এবং সেই অনুযায়ী দুই থেকে তিনটা প্রোডাক্ট রেকমেন্ড করুন।
উদাহরণস্বরূপ, ক্রস-সেলিং এর সময় যখন কেউ আপনার থেকে ইমেইল সিকিউরিটি কিনতে চায় আপনি তখন তাকে ইমেইল সিকিউরিটির সাথে ফায়ারওয়াল (Firewall), আইপিএস (IPS), আইডিএস (IDS) অফার করতে পারেন, বা এসব কিছুই একটা প্যাকেজ আকারে অফার করতে পারেন। একইরকম ভাবে আপ-সেলিং এর সময় যখন কেউ আগেই আপনার থেকে কোনো সার্ভিস নিয়েছে তাকে পরবর্তী যেকোনো সার্ভিসের সাথে আপডেটেড আরো কিছু সার্ভিস অফার করতে পারেন।
বান্ডলিং
আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং দুইটা প্রসেসেই আপনি বান্ডলিং সিস্টেম চালু করতে পারেন। এটাও খুবই কার্যকরী একটা সেলস স্ট্র্যাটেজি। যেমন, আপনি ওয়ার্ডপ্রেস টেমপ্লেটস, (WordPress templates), প্লাগিংস, (Plugins), লোগোস (logos) এগুলি আলাদা আলাদা সেল না করে একটা প্যাকেজ আকারে নিয়ে এসে সেল করতে পারেন।
কাস্টমার যখন একই জায়গায় সবধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে যায়, তখন তাদের ইন্টারেস্টও বাড়ে ওই প্যাকেজের প্রতি এবং তারা এরকম প্যাকেজ কেনাটাই প্রেফার করে।
কাস্টমার সম্পর্কে জানুন
যেকোনো সেলস স্ট্র্যাটেজি ফলো করার আগে কাস্টমার সম্পর্কে ভালো করে রিসার্চ করে নেয়া জরুরি। আপনার কাস্টমার সম্পর্কে ভালো করে রিসার্চ করুন, তাদের চাহিদা, তাদের ইন্টারেস্ট এগুলো বুঝার ট্রাই করুন। প্রয়োজনে সার্ভে করুন। তাহলে আপনি মোটামুটি ভালো একটা আইডিয়া পাবেন, আপনার কাস্টমারদের চাহিদা সম্পর্কে।
এবং যখন আপনি কাস্টমারের চাহিদা, ইন্টারেস্ট সম্পর্কে ভালো আইডিয়া পাবেন, সেই অনুযায়ী প্ল্যান, এবং সেলস স্ট্র্যাটেজি তৈরি করুন। যেমন আলাদা আলাদা কাস্টমারদের জন্য আলাদা আলাদা অফার এবং বান্ডেলিং সেট করা। তাদেরকে ইনডিভিজুয়াল ইমেইল এবং টেক্সট সেন্ড করা, যাতে করে তারা বুঝতে পারে যে, অফার টা শুধুমাত্র তাদের জন্যই।
২৫% রুল (25% Rule) ফলো করুন
একটা সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ রুল অথবা সেলস স্ট্র্যাটেজি হিসেবে কখনোই এমন আইটেম আপ-সেল এবং ক্রস-সেল করবেন না যেটার চার্জ অরিজিনাল অর্ডারের প্রাইসের থেকে ২৫% এরও বেশি হয়। আপনাকে কাস্টমারের বাজেট বুঝতে হবে, উদাহরণস্বরূপ, যখন কেউ একজন একটা বিশ হাজার টাকা বাজেটের এন্ড্রয়েড মোবাইল কেনার জন্য আসে, তখন রেকমেন্ড হিসেবে তাকে কোনো সেলস-পার্সন আইফোন অফার করতে পারেনা। সেলস পার্সন কে এমন কিছু অফার করতে হবে, যেটা কাস্টমারের এন্ড্রয়েড মোবাইলের সাথে ব্যবহারযোগ্য এবং ভালো সার্ভিস পাবে। ২৫% রুলসের মধ্যে স্টিক থাকার মাধ্যমে সেলস পার্সন কাস্টমারদের অনর্থক সাজেশন এবং ঝামেলা কে এভয়েড করতে পারে।
ক্রস-সেলিং এর ক্ষেত্রেও ব্যাপার টা সেইম। যেমন একজন কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে একশো টাকায় একটা বার্গার অর্ডার করলো, এখন ওয়েটার এডিশনাল সার্ভিস হিসেবে ফ্রাইড রাইস অফার করলো যেটার কস্ট্ পরতে পারে দুইশো টাকার মতো, যেটা কাস্টমারের বাজেটের বাইরেও হতে পারে। ওয়েটার কে অবশ্যই এমন কিছু ক্রস-সেল করার ট্রাই করা উচিত না যেটা কাস্টমার কে একশো পঁচিশ টাকার বেশি চার্জ করে।
পরিশেষে, আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং হলো এমন দুটো সেলস স্ট্র্যাটেজি যেগুলি যেকোনো বিজনেসের সেলস প্রফিট বাড়ানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য সেলস স্ট্র্যাটেজি ফলো করার পাশাপাশি উপরের টিপস গুলি ফলো করুন এবং প্রোপারলি আপ-সেলিং এবং ক্রস-সেলিং করুন। তাহলে বিজনেসের প্রফিট বাড়তে খুব বেশি টাইম লাগবেনা।