ই-কমার্স বিজনেস শুরু করুন – স্টেপ বাই স্টেপ কমপ্লিট গাইড

ই-কমার্স বিজনেস
Share This Post

আর দশটা বিজনেসের মতন ই-কমার্স বিজনেস গড়ে তুলতেও প্রচুর সময়, অর্থ আর ধৈর্যের দরকার হয়। বর্তমান সময়ে ট্র্যাডিশনাল ফিজিক্যাল বিজনেস গুলির পরিবর্তে ই-কমার্স বেশি জনপ্রিয় উঠছে। যেসব উদ্যোক্তা ই-কমার্স বিজনেস করতে চান তাদেরকে অবশ্যই ব্যবসায় নামার আগে এর সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত।

আমাদের আজকের ব্লগে আমরা ই-কমার্স বিজনেস গড়ে তোলার প্রক্রিয়া স্টেপ বাই স্টেপ আলোচনা করবো। এর ভেতর আইনি ব্যাপার স্যাপার, মার্কেটিং সহ সবকিছুই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

ই-কমার্স বিজনেস কি? 

টাইম মেশিনে করে আজ থেকে মাত্র দশ বছর আগের কোন লোককে যদি ২০২২ সালে নিয়ে আসা হয় তাঁর কাছে মনে হবে সভ্যতা বুঝি এক ধাক্কায় হাজার বছর এগিয়ে গেছে। এই সেদিনকার কথা শপিং করতে আমাদের নিউমার্কেট কিংবা বসুন্ধরা সিটিতে যাওয়া ছাড়া গতি ছিলো না,খাবার খেতে হলে অবশ্যই যেতে হতো রেস্টুরেন্টে । কিন্তু, আজকে দেখুন অনলাইনে ঘরে বসে অর্ডার দিয়েই পেয়ে যাচ্ছেন পছন্দের জামাকাপড়, হাংগরি নাকি অথবা ফুডপান্ডায় ঢুকেই আনিয়ে নেয়া যাচ্ছে পছন্দের রেস্টুরেন্টের খাবার।

এক কথায় এই ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য,কেনাকাটার সামগ্রিক প্রক্রিয়াই ই-কমার্স নামে পরিচিত। সহজে বললে, ইন্টারনেটে হয় যেই কমার্স (বাণিজ্য) তাকেই বলে ই-কমার্স।

ই-কমার্স ব্যবসা বাণিজ্য একদিক থেকে সহজ করে দিয়েছে। আজ কেউ ব্যবসা করতে চাইলে দোকান, গুদাম, কর্মচারীর বিশাল বহর না হলেও চলবে। কেবল একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমেই ব্যবসা করে কেউ চাইলে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নিতে পারবেন।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স বিজনেসের অবস্থান

ই-কমার্স নিয়ে বড় বড় অর্থনীতিবিদরা চিন্তা করেছেন সেই ১৯৬০ এর দশক থেকে । তবে আসল ব্রেক-থ্রু আসে ২০০১ সালে। নতুন শতাব্দীর প্রথমেই জেফ বেজোসের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে অনলাইন ভিত্তিক বইয়ের দোকান “অ্যামাজন”। ২০২২ সালে এসে অ্যামাজনের গ্রাহক হয়েছে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন। আর প্রোডাক্ট লিস্ট এখন শুধু বই নেই। যুক্ত হয়েছে প্রায় যাবতীয় সকল কিছু। আমাজন, কিন্ডেলের মতন অনলাইন শপগুলো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেই পরিবর্তন শুরু করেছিলো। দেখা যাচ্ছে, তাই-ই ব্যবসার ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে।

ইকমার্স-বিজনেস

২০১৬ সালের এক জরিপ থেকে জানা যায়, সেই বছর বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ১.৯১৫ মার্কিন ডলারের ব্যবসা হয়। আমরা খুব সহজেই বুঝে নিতে পারি যে ২০২২ সালে এই পরিমান আরো বেড়ে যাবে। সত্যিকার অর্থে, করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি বেঁচে আছে কেবল “ই-কমার্স” এর বদৌলতে । বিশ্বের ইতিহাসে দেখা গেছে, এক একটি মহামারী সাথে করে অর্থনৈতিক মহামন্দা এবং দূর্ভিক্ষ নিয়ে আসে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার যে অর্থনীতি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা শুধু মাত্র ই-কমার্সের কারনে। 

বাংলাদেশে ই-কমার্স বিজনেস

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে এবার নজর ঘুরিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসা যাক। ২০১৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশে জ্যামিতিক হারে ই-কমার্শিয়াল সাইট বাড়তে থাকে। শুধু ফেসবুকেই ৮০০০ এরও বেশি অনলাইন ব্যবসার পেইজ রয়েছে।  ২০১৭ সাল পর্যন্ত হিসাবে পাওয়া যাচ্ছে ই-কমার্সের বাজারটা প্রায় ১০০ কোটি টাকার।

করোনা ভাইরাস মহামারীকালে ই-কমার্সের  বিজনেসের আয়তন আরো বেড়ে গেছে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( ই-ক্যাব) এর মতে ২০২০ সালে প্যানডেমিকের সময়কালে ই-কমার্স সেক্টরে লেনদেনের পরিমান প্রায় ৭০% বেড়ে গেছে। ২০২১ সালে এর বাংলাদেশে এর মার্কেট সাইজ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন ২০২৩ সাল নাগাদ ই-কমার্সের মার্কেট সাইজ হবে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড”। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড জনসংখ্যার এমন একটি অবস্থা যখন কর্মক্ষম জনশক্তির পরিমান কর্মে অক্ষম জনশক্তির চাইতে বেশি হয়। বাংলাদেশ এমন একটি পর্যায়ে খুব শীঘ্রই পৌঁছাতে যাচ্ছে। এই সময়ের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব। বর্তমানে বেকারত্বের হার যে বেড়ে যাচ্ছে এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এটি। 

ই-কমার্স সেক্টরকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশের এই কর্মক্ষম বেকার জনশক্তিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আমাদের সামনে জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে আছে চীন। চীন সরকারের পলিসি এবং তাদের জনগণের সদিচ্ছা চীনের অর্থনীতিতে ই-কমার্সের অবদান বৃদ্ধি করে। এখন চীন যে বিশ্ব অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তার অবদান অনেকাংশেই ই-কমার্সের।

আমাদের বাঙালি চরিত্রের যে “চাকুরিজীবী” বৈশিষ্ট্য তা বদলানোর সময় এসেছে। সময় এসেছে ই-কমার্স সেক্টরের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর। আপনি যেহেতু আমাদের এই ব্লগটি পড়ছেন আমরা ধারণা করতে পারি আপনি বাঁধাধরা নিয়মকে ভাঙার মনস্কামনা নিয়েই তা পড়ছেন। আমরা আপনার ভিন্নচিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে সাহায্য করার জন্য ই-কমার্স গঠন করার ধাপগুলো তুলে ধরছি-

১) মার্কেট নিয়ে গবেষণা করা এবং মার্কেট নিশ খুঁজে বের করাঃ-

যেকোন ব্যবসাতে মার্কেট রিসার্চ হচ্ছে প্রথম ধাপ। অর্থাৎ,আপনি কি ব্যবসা করতে চান? আপনার প্রোডাক্ট কি হবে? আপনার ক্রেতা কারা হবে? এই কতটাকায় বিক্রি করলে আপনি ক্রেতাও ধরতে পারবেন আবার লাভও করতে পারবেন এই সমস্ত ব্যাপার নিয়ে আপনাকে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে। বাজার নিয়ে গবেষণা করলেই আপনি কেবল এই সম্পর্কে একটি ভাল আইডিয়া পেতে পারেন। 

এই বাজার গবেষণা ঠিকঠাক মতন করতে পারলেই আপনার পক্ষে “মার্কেট নিশ” খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।

ইকমার্স বিজনেস
এখন প্রশ্ন, “নিশ” কি? 

“নিশ (niche)” এই ইংরেজি শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে “কোনা”। যেমন আপনি ঘর পরিষ্কার করবেন ঘরের যেকোন একটি অংশ থেকে পরিষ্কার করা শুরু করবেন। মুখের ভাষায় আমরা বলি “ঘরের ওই কোনা…” । 

ঠিক সেরকম ভাবেই “মার্কেট নিশ” বলতে “মার্কেটের এক কোনা” বোঝায়। যেমন,একটি মার্কেটের সব প্রোডাক্ট কিন্তু আপনি বিক্রি করবেন না। যেকোন একটি দ্রব্য বিক্রি করা দিয়ে আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করবেন। এটাই হচ্ছে আপনার নিশ প্রোডাক্ট। আবার,সব ক্রেতার কাছেই কিন্তু প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন না। একটি নির্দিষ্ট বয়সের ,নির্দিষ্ট অঞ্চলের কিংবা নির্দিষ্ট পেশার মানুষকে আপনি আপনার “টার্গেট কাস্টমার” বানাবেন। এটাও এক ধরণের নিশ।

ই-কমার্স সাধারণত তিন ধরণের প্রোডাক্ট বা দ্রব্য বিক্রি হয়। দুই ধরণের পণ্য (goods) – ফিজিক্যাল পণ্য ও ডিজিটাল পণ্য  আর সেবা (service)।

 আপনাকে পুরো ব্যাপারটা রিসার্চ করে একটি বিজনেস প্ল্যান নিয়ে মাঠে নামতে হবে।

মার্কেট রিসার্চ করে “নিশ” ঠিক না করে যদি আপনি ব্যবসায় নামেন তাহলে খুব বেশি সম্ভবনা আছে আপনার ব্যবসাটি ব্যর্থ হওয়ার। 

২) প্রতিষ্ঠানের নাম এবং আইনি কাঠামো ঠিক করাঃ-

পয়েন্টে যাওয়ার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলে নেই। বাংলাদেশে অধিকাংশ অনলাইন ব্যবসা শুরু হয় একটি ওয়েবসাইট খোলার মধ্য দিয়ে কিংবা ফেসবুকের একটি পেইজ খোলার মধ্য দিয়ে। আগেই বলেছি কয়েক বছর আগে দেখা গেছে কেবল ফেসবুকেই ৮০০০ এর বেশি পেইজ আছে যারা অনলাইন ব্যবসা করে।

এই সমস্ত ব্যবসার কোন আইনি কাঠামো নেই। সত্য কথা বলতে গেলে বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার এবং ব্যবসায়িক লেনদেন সংক্রান্ত কোন আইনেই ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে কোন কথা নেই। দেশ এখনও চলছে ১৯৩০ সালের বিক্রয় আইন দ্বারা যার ভেতর খুব স্বাভাবিকভাবেই অনলাইন সেলস নিয়ে কোন কথা নেই। একে সংশোধন করে এখনও পর্যন্ত যুগোপযোগী করা হয়নি। ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনেও অনলাইন ব্যবসা নিয়ে কোন কথা নেই। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ই-কমার্স যতদূর এসেছে তার পুরোটাই হচ্ছে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যকার বিশ্বাসের মাধ্যমে।

“বিশ্বাস” হচ্ছে ব্যবসার সবচাইতে বড় পুঁজি। কিন্তু, ২০২১ সালে ই-কমার্স খাতে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যার ফলশ্রুতিতে মানুষের মাঝে এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বড় বড় কয়েকটি ই-কমার্স ফার্মের বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা নিয়ে প্রোডাক্ট না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগ উঠেছে নিম্নমানের দ্রব্য সরবরাহ করার। এই সমস্ত ঘটনার ফলে সম্প্রতি সরকার ই-কমার্স খাতকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স খাতে ঘটে যাওয়া স্ক্যান্ডালগুলো কাস্টমারদের আরো স্মার্ট করেছে। তারা যাচাই বাছাই না করে আর পণ্য কিনবে না। তাই আপনি যখন কোন নতুন ই-কমার্স বিজনেস গঠন করবেন তখন অবশ্যই এই সমস্ত বিষয় মাথায় রাখবেন। বাংলাদেশে সাধারণত চার ধরনের ই-কমার্স বিজনেস দেখা যায়ঃ-

ই-কমার্স বিজনেস সাইট

i) B2B ( বিজনেস টু বিজনেস) –

 একটি কোম্পানি অন্য বিজনেস কোম্পানির কাছে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে। যেমনঃ- কেমিক্যাল,স্টেশনারি ইত্যাদি। 

ii) B2C ( বিজনেস টু কাস্টমার)

অধিকাংশ ই-কমার্স  বিজনেসই এই ঘরানার ।এক্ষত্রে আপনি সরাসরি আপনার কাস্টমারের কাছে দ্রব্য বিক্রি করবেন। যেমনঃ- রকমারি ডট কম।

iii) C2C ( কাস্টমার টু কাস্টমার)

এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনেই কাস্টমার। একটি প্ল্যাটফর্মের থেকে পণ্য বিক্রয় করেন। যেমনঃ- বিক্রয় ডট কম।

iv) B2E ( বিজনেস টু এমপ্লয়ি)

এক্ষেত্রে বিজনেস চাকরি প্রার্থীদের কাছে বিভিন্ন জব সার্কুলার পৌঁছে দিয়ে থাকে। যেমনঃ- বিডিজবস।

আপনার যেই ব্যবসাই করেন খুবই বেশি সম্ভাবনা এই চার ঘরানার বাইরে যাবে না। আপনার আইন-কানুন যা থাকার এই চার ঘরানাকে ঘিরেই থাকবে।

ওইরকম বিধিবদ্ধ আইন না থাকলেও। কিছু আইনি প্রক্রিয়া যে নেই তা কিন্তু নয়। সমস্যা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারা যেসব অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখেন তাদের ভেতর অধিকাংশই এইসব নিয়ম কানুনের কোন তোয়াক্কাই করে না। কিন্তু,সময় বদলাচ্ছে কাস্টমার এখন শুধু বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে পণ্য কিনবে না। আমাদের সাজেশন হচ্ছে আপনি যদি কিছু আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান তা আপনার প্রতি কাস্টমারদের বিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। এর কিছু প্রক্রিয়া এরকমঃ-

ক) ই-টিন নাম্বার সেট/ট্রেড লাইসেন্স করা করাঃ- 

আপনার ব্যবসা যদি সোল প্রোপাইটরশিপ বা ব্যক্তিগত ব্যবসা হয় । আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট থেকে পণ্য বিক্রি করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেড লাইসেন্স এবং ই-টিন সেট করে নিবেন। এই নিবন্ধন হবে সোল প্রোপাইটশিপের নামে ।

খ) পার্টনারশিপ,কোম্পানি বা এসোসিয়েশনঃ

প্রতিষ্ঠানের ধরন যদি কোম্পানি বা পার্টনারশিপ হয় তাহলে কোম্পানি,পার্টনারশিপ কিংবা এসোসিয়েশনের জন্য বাংলাদেশে যেই আইন আছে  সেই আইনের অধীনেই এই কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন হবে।

গ) ডোমেইন বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিঃ-

অনেকে আছেন অনলাইনে বিভিন্ন ডিজাইন,ব্লগ আর্টিকেল ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে। এইসকল পণ্য ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির অধীনে আসে। আপনার ব্যবসাটি যদি এই সংক্রান্ত হয় তাহলে ট্রেডমার্ক,কপিরাইট প্রভৃতির জন্য যেই আইন আছে তার অধীনে আপনাকে রেজিস্ট্রি করতে হবে।

ঘ) পেমেন্ট মেথডঃ

পেমেন্ট মেথড একটি জায়গা যেখানে আপনি কিছু মাত্রায় হলেও আইনের আওতায় আসতে বাধ্য। কারন,অনলাইন ব্যবসার অধিকাংশ লেনদেনই হয় বিভিন্ন অনলাইন সার্ভিস বিকাশ,নগদ, নেক্সাস ইত্যাদির মাধ্যমে। এইসব মোবাইল এবং অনলাইন ব্যাংকিং সার্ভিসগুলো অলরেডি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নিয়ম কানুন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এসব জায়গায় আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে বিজনেস একাউন্ট খুলতে গেলে আপনাকে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে তার জন্য আপনি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যতে বাধ্য। যেসব কাগজপত্র দরকার-

  • প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স।
  • মালিকের জাতীয় পরিচয় পত্র ও ছবি।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • প্রতিষ্ঠানের লোগো।
  • ওয়েবসাইট URL
  • স্বাক্ষর এবং সিল।

সুতরাং, বুঝতেই পারছেন এখনো পর্যন্ত কোন আইন না থাকলেও কাস্টমার ধরে রাখতে আপনাকে অবশ্যই কিছু আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতেই হবে।

৩) ই-কমার্স বিজনেস সাইট তৈরি করা এবং ডেভেলপমেন্টঃ-

ওয়েবসাইট আপনাকে আরো আগেই তৈরি করে ফেলতে হবে। যেহেতু, আপনার লেনদেনের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট ইউআরএল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পয়েন্টে আমরা ওয়েবসাইটের ব্যাপারে কিছু কথা বলবো।

কোম্পানির নামেই ওয়েবসাইটের ডোমেইন কিনতে হবে। ই-কমার্স বিজনেস ওয়েবসাইট ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে পারেন। এইসব প্ল্যাটফর্ম স্পেশালি ই-কমার্স সাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ করে থাকে। এরকম কয়েকটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে Shopify, Woo commerce, Squarespace, Magneto ইত্যাদি।

৪)প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এবং লিস্টিংঃ-

আপনার ই-কমার্স বিজনেস দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে লিগ্যাল এবং টেকনোলজিক্যাল বিভিন্ন স্টেপ আপনি শেষ করে এসেছেন। এবার আপনি প্রবেশ করছেন মার্কেটিং লেভেলে। প্রথমে আপনি যেই মার্কেট নিশ নিয়ে ব্যবসা করবেন বলে ঠিক করেছেন এবার আপনার কাজ হবে তার ডেভেলপমেন্ট করা । 

এইক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। আপনি যেইসব প্রডাক্ট বিক্রি করবেন বলে ঠিক করেছেন তারা যাতে গুগল সার্চ লিস্টে উপরের দিকে থাকে সেই সেজন্য আপনাকে বিভিন্ন বিষয় ফলো করতে হবে। যেমনঃ- SEO,SEM ইত্যাদি।

আবার, বর্তমান যুগের লাইফলাইন সোশ্যাল মিডিয়াতেও আপনার ব্যবসার প্রচার প্রচারণার দিকে আপনার মনোনিবেশ করতে হবে। এইক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে।

অনলাইন দুনিয়ায় কাস্টমারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হলে আপনাকে ভাল মানের কন্টেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। এর ভেতর রয়েছে ব্লগ, ইনফোগ্রাফ,ইমেজ,ভিডিও ইত্যাদি। 

৫) কাস্টমার রিলেশনশিপ এন্ড ম্যানেজমেন্টঃ-

আপনি যদি ক্রেতার বিশ্বাস ধরে রাখতে চান এটা হবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর আগে যতগুলো ধাপ আলোচিত হয়েছে তার সবকিছুর মূলকথা ছিলো একটি কোম্পানি লাউঞ্জ করা। কিন্তু,মার্কেটে টিকে থাকতে হলে আপনাকে এই শেষের ধাপ সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর ভেতর আছেঃ-

  • পণ্য বা সেবা যথাসময়ে কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো। কোন কারনে দেরী হলে ভুল স্বীকার করা।
  • যেই পণ্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেটাই দেয়া।
  • বেশি দাম না রাখা। যে পণ্যের যেই দাম সেটাই রাখা।
  • আগে টাকা নিয়ে রাখলে পণ্য দিতে না পারলে টাকা ফেরত দেয়া।
  • মার্কেটিং পলিসিতে নানাসময়ে ছাড় বা অফার রাখা। 
  • প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং পার্টনারদের মতামত শোনা। কেবল নিজের মতামত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা না করা।
  • কাস্টমারদের কাছে ভুল স্বীকার করা এবং কোম্পানি লিডার হিসেবে ভুলের দায়িত্ব নিয়ে নেয়া।
  • কর্মীদের টার্গেট দেয়া এবং টার্গেট পূরণ হলে তাঁদেরকে পুরস্কৃত করা।
শেষ কথা
ই-কমার্স

ই-কমার্স বিজনেস খুব বড় সেক্টর। এটার জানার শেষ নেই। কিন্তু এখান থেকে আপনি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার একটি সম্পূর্ণ গাইডলাইন পাবেন।

পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
সিজনাল ক্যাম্পেইন বৃদ্ধি করার জন্য ৫টি ট্রেন্ডস এন্ড টিপস
Marketing

সিজনাল ক্যাম্পেইন বৃদ্ধি করার জন্য ৫টি ট্রেন্ডস এন্ড টিপস

বিগত কয়েক বছরে বিজনেস কম্পিটিশন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে টিকে থাকতে এবং এগিয়ে যেতে সিজনাল ক্যাম্পেইন গুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে উৎসব, ছুটির

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স (EI)  কি এবং কিভাবে নিজের EI ইম্প্রুভ করবেন
Marketing

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স (EI)  কি এবং কিভাবে নিজের EI ইম্প্রুভ করবেন

আপনার কর্মক্ষেত্রে কি কখনো এমন হয়েছে যে একটি কাজ একাধিক বার করার পরও আপনাকে কথা শুনতে হচ্ছে। একটা কাজ বার বার এডিট করার অর্ডার আসছে।