যে ৬টি কারণে ইউনিক আইডিয়া থাকা সত্ত্বেও উদ্যোগ ব্যর্থ হয়

উদ্যোগ ব্যর্থ
Share This Post

“বাণিজ্যে বসত লক্ষী” বাংলা ভাষার একটি প্রবাদ।

যদিও বাঙালির চাকরি করার মানসিকতাই বেশি। কিন্তু, নতুন শতাব্দীর ডিজিটাল বিপ্লবের পর তরুনদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার বা ব্যবসা করার প্রবণতা বেড়ে যায়। এখন ফেসবুক খুললেই দেখা যায় বই থেকে শুরু করে চাল-ডাল ,তরিতরকারি ,ফলমূল ইত্যাদি পণ্যের বিজ্ঞাপন। অনলাইন ভিত্তিক এই উদ্যোগ গুলোর অপর পৃষ্ঠার চিত্র হচ্ছে তাদের অধিকাংশই একটি নির্দিষ্ট সময় পর মুখ থুবড়ে পড়ে। দুর্দান্ত আইডিয়া থাকা সত্ত্বেও ,যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব থাকার পরেও উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে,কেন? 

ভাল আইডিয়া আছে। ইনভেস্টমেন্ট আছে। আছে শিক্ষিত এবং মেধাবী উদ্যোক্তা। এরপরেও কেন এত এত স্টার্ট আপ বিজনেস মার্কেটে টিকে থাকতে পারছে না।

আজকের এই লেখায় আমরা, ইউনিক আইডিয়া থাকা সত্ত্বেও উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার কারন গুলো দেখবো। 

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং পরিকল্পনার অভাব

অধিকাংশ মানুষের মধ্যে নিজেদের আইডিয়ার প্রতি একধরণের মুগ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। তারা একটি নতুন আইডিয়া পেলে তার প্রতি এতটাই মোহিত হয়ে পড়েন যে,তাদের আইডিয়া যে সফল হবেই এই বিষয়ে তারা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যান এবং কোটি কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। স্বপ্ন দেখা অবশ্যই কোন খারাপ জিনিস না। কিন্তু ,তাঁদের এই “অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস” তাদেরকে অন্ধ করে দেয়। ফলে তারা বাজারের রূঢ় বাস্তবতা দেখতে পায় না। আর যেহেতু তারা সফলতার ব্যাপার মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে মাঠে নামে সেহেতু তারা আসল কাজটি করতে ভুলে যায় “পরিকল্পনা”। 

একটি ভাল বিজনেস প্ল্যান নিশ্চিত করবে আপনার ব্যবসা চলবে কি না। আইডিয়া যত ভালই থাকুক যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকে তাহলে উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আপনার প্রাথমিক পরিকল্পনা অনেক সময় কাজ নাও করতে পারে। সেইক্ষেত্রে বিকল্প পরিকল্পনা বা “প্ল্যান-বি” রাখুন। এতে উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়বে না।

উদ্যোগ সময়োপযোগী না হলে

কোন ধরনের পণ্য বা সেবা আমি বিক্রি করতে যাচ্ছি তা সময়োপযোগী কি না সেই সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ক্লাসের একটি জনপ্রিয় উদাহরণ থেকে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে-

কেউ যদি জানুয়ারি মাসে ছাতার ব্যবসা করতে চায় সে যে শুরুতেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। কারন,শীতকালে ছাতা কে কিনবে !

আবার ধরুন ,২০২২ সালে এসে কেউ চাইল্ডহুড নস্টালজিয়ার থেকে একটি সিডির ব্যবসা খুলে বসলেন। ফলাফল, আপনার উদ্যোগ ব্যর্থ হবে।

কেউ কেউ আছে আজকে একটি পন্য বাজারে আনার কথা ভাবলেন। এরপর পণ্যের ডেভেলপমেন্টে কাটিয়ে দিলেন ৪/৫ বছর। ততদিনে বাজারে ওই পণ্যের উপযোগিতা শেষ। 

আবার,কারো মাথায় আজকে একটি আইডিয়া এলো কালকেই তিনি ব্যবসা শুরু করে দিলেন। দেখা গেলো বাজারে এই পণ্যের চাহিদা নেই। 

অর্থাৎ,তাড়াহুড়া এবং দীর্ঘসূত্রিতা এই দুই-ই ব্যবসার জন্য খারাপ। তেমনই উদ্যোগে কোন আবেগকে জায়গা দেয়া যাবে না। বাজারের চাহিদা বুঝে উদ্যোগ নিতে হবে। সঠিক সময়ে ,সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

মার্কেট রিসার্চের অভাবে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়

উদ্যোগ-ব্যর্থ

বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকেই কাস্টমার মনে করে যদি আপনি ব্যবসায় নামেন তাহলে আপনার ব্যবসা চলবে না। স্বাভাবিক ভাবেই আপনার উদ্যোগ ব্যর্থ হবে। বাজার নিয়ে সঠিক গবেষণা করে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই ঠিক করে নিতে হবে।

প্রথমত, প্রোডাক্ট ডিমান্ড। অর্থাৎ, যেই প্রোডাক্ট ( পণ্য বা সেবা) আমি বিক্রি করতে চাই মার্কেটে তার ডিমান্ড আছে কি না সেটি নিশ্চিত হতে হবে। যদি ডিমান্ড না থাকে সেই প্রোডাক্ট বিক্রি করে আমি লাভবান হতে পারবো না।

দ্বিতীয়ত,টার্গেট কাস্টমার। যদি ডিমান্ড থেকে থাকে ,কাদের ভেতর আছে? একটি মার্কেটের সব কাস্টমারের কিন্তু একটি প্রোডাক্টের প্রয়োজন হয় না। 

এই প্রোডাক্টের চাহিদা কি শিক্ষার্থীদের ভেতর বেশি?

নারীদের ভেতর বেশি?

শিশুদের ভেতর বেশি?

নাকি মধ্যবয়স্ক পুরুষদের ভেতর বেশি?

শ্রমিকদের ভেতর বেশি? নাকি চাকুরিজীবীদের ভেতর বেশি?

এইসব প্রশ্নের উত্তর মার্কেট রিসার্চের মাধ্যমে খুঁজে বের করে ওই শ্রেণী,পেশা,লিঙ্গ কিংবা বয়সের মানুষদেরকে টার্গেট করতে হবে। 

তৃতীয়ত, প্রোডাক্ট সম্পর্কে আপডেটেড থাকা। যেহেতু,তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। একদিনের ভেতরেও একটি পণ্যের আপডেটেড ভার্সন বিশ্ববাজারে চলে আসতে পারে। সেইক্ষেত্রে আপনি যদি এই সম্পর্কে জ্ঞান না রাখেন আপনার কম্পিটিটরদের থেকে পিছিয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।

পার্টনারদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব

আপনার দলে অনেক প্রতিভাবান,জ্ঞানী লোক থাকতে পারে। কিন্তু,তারা কিংবা আপনি নিজেও যদি সবসময় কেবল আপনার মতটিই কেবল প্রতিষ্ঠা করতে জোর দেন। টিম পারফরম্যান্সের কথা না ভাবেন টিম মেম্বারদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব হওয়ার খুব বেশি সম্ভাবনা আছে। এতে আপনার ব্যবসা তো হবেই না, উলটো কিছু মানুষের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হবে।

বাংলায় যাকে বলে ,”অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট”।

আপনাকে বুঝতে কোন জায়গায় কোন মানুষের দরকার। আর একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই সবার কথা মনোযোগের সাথে শুনতে হবে। 

আপনি যদি টিম মেম্বারদের মতামত গুরুত্ব না দিয়ে সবসময় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে চান তাহলে টিম বন্ডিং ঠিকমতো হবে না। 

মানি ম্যানেজমেন্টে অদক্ষতা

বিনিয়োগ করা এবং সঠিক ভাবে বিনিয়োগ করতে না পারলে ব্যবসার মাঝপথেই পুঁজি ফুরিয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। 

সঠিক হিসাব রক্ষণ এজন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তাকে পরিকল্পনামাফিক একটু একটু করে বিনিয়োগ করতে হবে। একবারে বেশি খরচের বহর মাথায় তুললে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

এজন্য ব্যবসার শুরু থেকেই কোন খাতে কি ভাবে খরচ করা হবে সেই সম্পর্কে সিইও’র একটি পরিষ্কার ধারনা থাকতে হবে। অবশ্যই বিকল্প উপায় সবসময় হাতে রাখতে হবে।

লোভ

ব্যবসার প্রথমেই খুব বেশি লাভের দিকে নজর দেয়া উচিত না। লংটার্মে মার্কেটে টিকে থাকতে হলে, প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই হওয়া উচিত লয়্যাল কাস্টমার তৈরি করা। দেখা যায় অনেক ব্যবসা ভাল চলছে এইরকম অবস্থায় অতিরিক্ত লাভের আশায় উদ্যোক্তা পণ্য বা সেবার দাম বাড়িয়ে দেন। কিংবা, প্রোডাক্টের মান কমিয়ে দেন। ফলস্বরূপ ,কাস্টমার তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। অতি লোভে তাঁতী নষ্ট!

আবার, কখনও পার্টনারদের মধ্যে কোম্পানির লভ্যাংশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়। এতে কোম্পানি ইমেজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান “গুডউইল” নষ্ট হয়।

শেষ কথা

অন্য অনেক কারন থাকলেও একটি অনন্য আইডিয়া সংবলিত উদ্যোগকে ব্যর্থ করে তোলার পেছনে এই ছয়টি কারন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। নবীন উদ্যোক্তারা ব্যবসা শুরু করার সময় এইসকল বিষয় খেয়াল রাখলে মার্কেটে টিকে থাকায় সুবিধা হবে।

পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

Don't wait!
Get the expert business advice You need in 2022

It's all include in our newsletter!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore
বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং- এর গাইডলাইন
Marketing

বিগিনার্সদের জন্য ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং গাইডলাইন

ফেইসবুক অ্যাডভার্টাইজিং, টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছানোর এক অন্যতম পাওয়ারফুল টুলস। ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে মার্কেটিং যত সহজ হয়েছে, কম্পিটিশন তত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিউজ

ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন
Marketing

ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিশ বেজড কম্পিটিটর রিসার্চ কিভাবে করবেন?

আপনার বিজনেস নিশ কি হবে? কি নিয়ে কাজ করবেন? বা কোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিই এপ্লাই করবেন। সব কিছু সিলেক্ট করার আগে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট ফ্যাক্ট হচ্ছে কম্পিটিটর