আপনি কি কখনও এমন কোনো ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের কথা শুনেছন, যারা শুধু রাতেই ডেলিভারি দেয়? শুধু রাত বললে ভুল হবে, সন্ধ্যা থেকে ঠিক ভোর অবধি চলে যাদের ফুড ডেলিভারি। আমাদের লেট নাইট ফুড ক্রেভিং মেটাতে এমনই এক অ্যাপস এখন সক্রিয় আছে বাংলাদেশে। যারা শুধু রাতের বেলায় ই ফুড ডেলিভারি করে থাকে। বলছিলাম বাংলাদেশের ফার্স্ট এভার চালু হওয়া নাইট শিফট ডেলিভারি সার্ভিস Munchies (মাঞ্চিস) এর কথা।
ফুড ডেলিভারি বর্তমানে খুব জনপ্রিয় একটি সার্ভিস। ডিজিটাল যুগে মানুষ চায় ঘরে বসেই সব কিছু পেয়ে যেতে। তাই যে কোনো অনলাইন অর্ডার ও হোম ডেলিভারির চাহিদা এখন অনেক বেশি৷ বিশেষ করে ব্যস্ত রাজধানী তে তো এর সর্বাধিক ডিমান্ড। তবে অনেক সময়ে আমাদের গভীর রাতেও প্রয়োজন পড়তে পারে অর্ডার করার। কেমন হয় যদি রাত তিন টায় অর্ডার করলেও খাবার চলে আসে আপনার দরজায়? এমনই একটি প্লাটফর্ম Munchies (মাঞ্চিস) এর সাথে আজকে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
সূচনা
Munchies (মাঞ্চিস) এর সূচনা হয় ফাউন্ডার, সিইও তামিম মৃধা ও তার টিমমেট অনিত কুমার দাস, নাফিসা আনজুৃম এর হাত ধরে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন কিছু করা যাতে করে দেশ ও দেশের মানুষের উপকারে আসতে পারে। পাশাপাশি নিজের একটি সফল স্টার্টআপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
সে চিন্তা থেকেই ডেলিভারি সার্ভিস শুরু হয়। সেটার নাম ছিল “Now”। করণা মহামারী পরিস্থিতিতে প্রথম এমন কিছু একটা করার আইডিয়া তাদের মাথায় আসে। প্রথমে তাদের এই চিন্তা ভাবনা শুধু নরমালি হোম ডেলিভারি সার্ভিস এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের ডেলিভারি কার্যক্রম ২০১৯ থেকেই চলে আসছিল।
কিন্তু ২০২০ সালে চাপ বাড়তে থাকে অনলাইন অর্ডারের এবং হোম ডেলিভারি ব্যপক জনপ্রিয়তা পায়। তারা লক্ষ্য করেন প্রচুর লোকের রাতের বেলা ওষুধ, মাস্ক স্যানিটাইজার ডেলিভারি করতে হচ্ছে। অর্থাৎ, রাতের বেলায় ও চাপ বাড়ছে। কিন্তু আলাদা করে কর্মী না থাকায় সারা রাতভর সার্ভিস দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
এরপর ই উদ্ভব ঘটে এই নতুন কনসেপ্ট এর। এটি একটি লেট নাইট ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম যারা মিড নাইটেও মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়। এক দিকে মানুষের ভোগান্তি কমবে, অন্য দিকে চাহিদা এত বেশি যে বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠাতারাও লাভবান হবেন। আর যেই ভাবনা সেই কাজ। একদম ২০২১ এর শুরু থেকেই অসাধারণ জার্নি এবং বর্তমানে পুরো ঢাকা কে কভার করছে Munchies (মাঞ্চিস)।
Munchies (মাঞ্চিস) কিভাবে কাজ করে?
শুরুর দিকে ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে তাদের অনলাইন অর্ডার ও হোম ডেলিভারি সেবা চালু ছিল। এখান থেকে গ্রাহকরা তাদের পছন্দ মত রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করতে পারেন এবং ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে রাতের বেলাতেই ডেলিভারি পেয়ে যান।
তাদের সাথে ঢাকার ২৯৬ টি রেস্টুরেন্ট অন বোর্ড যুক্ত আছে। আপনি চাইলে রাতের যেকোনো সময়ে এসব রেস্টুরেন্টে থেকে খাবার অর্ডার করতে পারবেন। তাছাড়া অসংখ্য হোম মেড ফুড সার্ভিস ও নামীদামী ফুড ব্রান্ড ও যুক্ত আছে। যেখান থেকে আপনি সরাসরি ফুড বা ডেইলি বাজার অর্ডার করতে পারবেন।
কিন্তু তাদের এখন আছে এন্ড্রয়েড অ্যাপস। যেটি ওয়েবসাইট থেকেও বেশি সক্রিয়। এখানে আপনি রাত ৮ টা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত অর্ডার প্লেস করতে পারবেন। এর জন্য দরকার হবে গুগল প্লে বা অ্যাপ স্টোর থেকে এটি ডাউনলোড করা। এবং যাবতীয় ইনফরমেশন দিয়ে সাইন আপ করা।
এখানে অর্ডার করাও সুপার ইজি। শুধু মাত্র রেস্টুরেন্টে, খাবার ও আপনার এড্রেস উল্লেখ করেই কিন্তু খাবার পেয়ে যাবেন খুব সহজেই।
বিশেষত্ব
ফুড ডেলিভারি সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম তো অনেক আছে। মাত্র এক বছর আগে পরিচয় পাওয়া Munchies (মাঞ্চিস) এর কি এমন বিশেষত্ব যে এটি এত দ্রুত সফল হচ্ছে? আসলে গভীর রাতে আপনার দরজায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছে এটাই তো তাদের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব৷ তাদের আরো স্পেশালিটির মধ্যে আছে-
- এক সাথে একাধিক সেকশনে অর্ডার করার সুযোগ
- রেস্টুরেন্টের খাবারের পাশাপাশি গ্রোসারি আইটেম অর্ডারের সূযোগ
- হোম মেড ফুড অর্ডার সুবিধা
- ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে অর্ডারের সূযোগ
- ফাস্ট ডেলিভারি
- হাইজেনিক ওয়ে তে ফুড ডেলিভারি
- খাবার আইটেম ছাড়াও প্রয়োজনে মেডিসিন, স্যানিটাইজার, মাস্ক ও পার্সোনাল হাইজিন এর জন্য প্রোডাক্ট ও অর্ডার করতে পারবেন
- এমন কি আপনার অর্ডার কতদূর পৌঁছে গেছে তাও ট্র্যাক করতে পারবেন অনায়সেই৷
অর্জন
সহ-প্রতিষ্ঠাতা অনিত কুমার দাস এর ভাষ্যমতে, এই প্রতিষ্ঠান টি তৈরি করা টা প্রথম দিকে খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ খুব কম রেস্টুরেন্ট-ই গভীর রাতে খোলা থাকে। আর এত রাতে খাবার প্রস্তুত করা ও ডেলিভারি করানো মুসকিল। তাই রেস্টুরেন্টে দের মালিকদের রাজি করানো খুব টাফ ছিল। কিন্তু এখন!
সমগ্র ঢাকার ২৯৬ এর মত রেস্টুরেন্ট সারারাত ধরে যুক্ত আছে৷ তাছাড়া বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে যারা ভোর পর্যন্ত না হলে ১০-১২ টা একটিভ থাকে। Munchies (মাঞ্চিস) এর পরিধি দিন দিন বাড়ছে। তাদের সাথে এখন কাজ করছে ১০০ এরও অধিক কর্মী।
শুধু রেস্টুরেন্টে নয়, তাদের সাথে এখন কাজ করছে অসংখ্য হোম মেড ফুড সার্ভিস, ৭ টির ও অধিক ফুড ব্র্যান্ড। বর্তমানে প্লে স্টোরে Munchies (মাঞ্চিস) ৪.২ রেটিং নিয়ে বেশ এগিয়ে আছে। সিইও তামিম মৃধা জানায়, বহু ইনভেস্টর তাদের সাথে ইনভেস্ট করার জন্য আগ্রহী হচ্ছে। মোট কথা এই অল্প সময়েই তাদের এই অর্জন বেশ প্রসংশনীয়।
ভবিষ্যৎ
এই সার্ভিসের কনসেপ্টটা শুরু থেকেই বেশ ইন্টারেস্টিং। কারণ এমন বিজনেস আইডিয়া আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ছিল না। বেশ কিছু ডেলিভারি সার্ভিস যদিও রাতে অর্ডার নিয়ে থাকে। তবে রাত আট টা থেকে ভোর ছয়টা অবধি এমন সেবা বাংলাদেশ এই প্রথম। তাই এটি ঢাকাবাসীর মধ্যে খুব অল্পতেই বেশ সারা ফেলে দিয়েছে।
ইতোমধ্যে Munchies (মাঞ্চিস) পুরো ঢাকা কভার করছে এবং আসা করছে খুব শীগ্রই বাংলাদেশের বিভাগীয় পর্যায়ে এই সেবা নিয়ে যেতে। পরবর্তী ফান্ডিং রাউন্ড এর পরেই হয়ত এই উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়ে যাবে। তরুন ও ক্রিয়েটিভ উদ্দোক্তাদের তৈরি এই সেবা নিয়ে ইনভেস্টর ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশার আলো দেখছেন। আমরাও আসা করি বাংলাদেশে এরকম ডিজিটাল সার্ভিস ছড়িয়ে পড়ুক। দেশের মানুষের জীবনযাত্রা আরো সহজ হোক।