একজন উদ্যোক্তার সাথে অন্যান্যদের পার্থক্য কোথায়? আমরা সবাই জানি একটি ব্যবসা বা উদ্যোগ অপরিমেয় ঝুঁকি মাথায় নিয়ে গড়ে তুলতে হয়। তারপরও কেন উদ্যোক্তারা দিনের পর দিন এর পেছনে লেগে থাকেন? যা তাঁদেরকে অবশেষে একজন সফল উদ্যোক্তাতে পরিণত করে।
আজকের লেখায় আমরা জানবো একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পাঁচটি সেরা ব্যাপার নিয়ে। যা উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে ঝুঁকি নিতে এবং এগিয়ে যেতে।
১। সৃজনশীলতার প্রয়োগঃ-
একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় সম্পদ তাঁর সৃজনশীলতা। চিন্তায় এবং কাজে নতুনত্ব আনা তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এমন একজন মানুষ যে, ৯টা-৫টা’র অফিস লাইফে নিজেকে বেঁধে ফেলতে চাইবেন না সেটাই তো স্বাভাবিক।
পৃথিবীর অনেক সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী থেকে দেখা গেছে যে, অফিস কালচারের “বস ইজ অলওয়েজ রাইট” থিওরি তাঁরা কখনোই মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের মতামত অনেক সময় বসেরা পছন্দ না করে ছুঁড়ে ফেলে দেন। পরে দেখা গেছে সেই আইডিয়া দিয়েই তাঁরা দুনিয়া বদলে দিয়েছেন।
স্পাইডারম্যানের স্রষ্টা স্ট্যান লি যখন স্পাইডারম্যানের আইডিয়া নিয়ে তাঁর পাবলিশারের কাছে গিয়েছিলেন তখন পাবলিশার এটিকে রীতিমতো “গারবেজ” বলে ছুঁড়ে ফেলে দেন। কিন্তু, আজকে দেখুন স্পাইডারম্যান মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে চলছে।
২। একজন উদ্যোক্তার সিদ্ধান্ত এবং আয়ের স্বাধীনতাঃ-
একজন উদ্যোক্তা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাঁর আয়ের ওপর অন্য কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তিনি নিজের টাইমটেবিল মতন কাজ সাজিয়ে নেন। প্রোডাক্ট লাইন নিজের মতন করে চুজ করতে পারেন। যেখানে তিনি খরচ করতে চান করতে পারেন। তাকে অন্য কারো অপর নির্ভর করতে হয় না । চাকরির বাঁধা জীবন কিংবা বাঁধা রোজগার তাঁকে দমাতে পারে না।
আপনি যত বড় চাকরিই করেন না কেন একটি পয়েন্টে এসে আপনাকে ঠিকই বাঁধা পড়ে যেতে হয় । কিন্তু, স্বাধীন উদ্যোগ কিংবা ব্যবসার ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। সেই হিসাবে বলা যায় উদ্যোক্তারা যেই সুবিধা পেয়ে থাকেন অন্য কোন মানুষ সেটি পান না।
ধরুন আপনি কোন বড় টেক-কোম্পানিতে চাকরি করছেন। কিন্তু ,সারাক্ষণ আপনার মাথায় ভবিষ্যৎ পৃথিবীর খাদ্যসংকটের কথা । কিছুই করতে পারছেন না। কিন্তু,আপনি যদি মালিক হতেন ? বলছিলাম মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের কথা। যিনি কিছুদিন আগে বিপুল পরিমান কৃষিজমি ক্রয় করেছেন।
৩। পরিবর্তন করার ক্ষমতাঃ-
একবার শুধু চিন্তা করুন,হুসেইন মুহম্মদ ইলিয়াস এবং সিফাত আদনানের মাথায় যেদিন পাঠাও রাইড শেয়ারিং-এর আইডিয়া এলো সেদিন ঢাকা শহরের কত মানুষের জীবনে গতি এলো? আগে যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষকে জ্যামে আটকা থাকতে হতো সেখানে কত কত ওয়ার্কিং আওয়ার বেঁচে গেলো।
আবার, ভেবে দেখুন জেফ বেজোসের অ্যামাজন এফবিএ কিভাবে বিশ্বব্যাপী কোটি মানুষের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে সহজ করে দিয়েছে।
একজন উদ্যোক্তা তাঁর আইডিয়া এবং কাজের মাধ্যমে শুধু নিজের নয় পুরো সমাজ এমনকি বিশ্বের গতিপ্রকৃতি বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। খুব কম পেশার মানুষের কাছেই এই ক্ষমতা থাকে।
৪। অ্যাকশন নেয়ার ক্ষমতাঃ-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর নির্মিত “শিন্ডলার্স লিস্ট” সিনেমায় একজন জার্মান উদ্যোক্তার গল্প উঠে এসেছে। অস্কার শিন্ডলার । সত্য ঘটনার ওপর নির্মিত এই সিনেমায় দেখা যায় শিন্ডলার তাঁর নিজস্ব বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে হিটলারের নাজি বাহিনীর কবল থেকে প্রায় ১২০০ এর মতন ইহুদীকে বাঁচান। পুরো বিশ্ব যখন এই গণহত্যার নিন্দা,উদ্বগ ইত্যাদি জানাতে ব্যস্ত ছিল তখন একজন উদ্যোক্তা কাজের কাজটি করে দিলেন।
এটা একজন উদ্যোক্তার অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য । সে খুব দ্রুতই তাঁর কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে কাজে নেমে পড়তে পারেন।
আপনি মনে করছেন আপনার এলাকায় ভাল স্কুল-কলেজ কিংবা হাসপাতাল নেই? আপনি একজন উদ্যোক্তা হলে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। অথবা খাদ্যাভাব দেখা দিলে আপনার উদ্যোগেই আপনি হাজার হাজার মানুষকে খাওয়াতে পারেন। আপনার কারো কাছে হাত পাততে হবে না। কারণ, আপনি একজন উদ্যোক্তা নিজের আয়ের ওপর যাঁর নিয়ন্ত্রণ আছে।
৫। সুযোগ কাজে লাগানোঃ-
সবাই যেখানে অভাবে দেখে একজন উদ্যোক্তা সেখানে সুযোগ দেখে।
করোনা মহামারীর সময় সারাবিশ্বেই ফিজিক্যাল বিজনেস বন্ধ ছিল। সেখানে অনলাইন ব্যবসাগুলো কিন্তু অনেক লাভ করেছে। ইনফ্যাক্ট অ্যামাজন এই সময়ে অন্যান্য সময়ের চাইতে কয়েকগুন বেশি প্রফিট করেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে অনলাইন বিজনেসগুলো এই সময়ে সুযোগটা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পেরেছে।
আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এই সময়ে শাড়ি, টি-শার্ট কিংবা ফল প্রভৃতির ব্যবসা করে বেশ ভাল টাকা ইনকাম করেছে। অথচ এই মহামারীর সময়েই অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের খবর কিন্তু বারবার পত্র-পত্রিকার হেডলাইন হয়েছে। এখান থেকেই একজন উদ্যোক্তার সাথে অন্যান্যদের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
নিঃসন্দেহে খারাপ সময়ে সম্ভাবনা সৃষ্টির এই গুনটি উদ্যোক্তাদের একটি ইউনিক ব্যাপার। বিশ্বের সকল সফল উদ্যোক্তাদের লক্ষণের মধ্যে এটা উল্লেখযোগ্য। পরিস্থিতি যেমনই হোক তাঁরা সেখান থেকে ঠিকই একটি সম্ভাবনা খুঁজে নিতে পারেন।
শেষ কথা
এই ছিল একজন উদ্যোক্তা হওয়ার সেরা পাঁচটি দিক নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল।
পুরো লেখাটি কেমন লাগলো, তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে সত্যিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি মনে হয় লেখাটি নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করবে পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও অনেক ইনফো কনটেন্ট এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।